আগুনের বড় ঝুঁকিতে যশোর,৯৫ শতাংশ ভবন ও মার্কেটে নেই অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ যশোর শহরের অধিকাংশ বাজার, বিপনিবিতান ও ভবনগুলো আগুনের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব ভবন ও বিপনিবিতানে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। দুর্ঘটনাবশত আগুন লাগলে যেমন বিপুল পরিমাণ সম্পদহানির আশঙ্কা রয়েছে তেমনি দুর্ঘটনার সময়ে নিরাপদে বেরিয়ে আসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও পানির উৎস না থাকায় রয়েছে মানুষের জীবনের ঝুুঁকি। রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনের পর জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে।
জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি তারা যশোর শহরে আগুনের ঝুঁকিতে থাকা ভবন ও মার্কেট চিহ্নিত করছে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শহরের প্রায় ৯৫ শতাংশ ভবন ও মার্কেটে নেই কোনো নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র বা ব্যবস্থা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে শহরের বড়বাজার এলাকা। বৃহত্তর এই মার্কেটে প্রায় তিন হাজার দোকান থাকলেও অধিকাংশ দোকানে নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। বাজারটিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই পানির উৎসও। সবমিলে এই বাজারটি বড় ধরনের অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানান।
বড়বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাজারের ৯৫ শতাংশ দোকানে নেই নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। কোনো দোকানের কোনায় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার সিলিন্ডার ঝুললেও তা মেয়াদোত্তীর্ণ। ব্যবসায়ীরা জানান, বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। বড় বাজারের চুড়িপট্টি এলাকার হাজী আব্দুল করিম রোডে সবচেয়ে বড় স্টেশনারি পণ্যের পাইকারি দোকান বিপি স্টোর। ওই দোকানে গিয়ে দেখা যায় সেখানে নেই কোনো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সেলস ম্যানেজার প্রেম সাহা বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা আগে কখনও ভাবেননি। সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুনের পর থেকে আমরা অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পাশেই স্টেশনারি প্রশাসধনীর বড় দোকান মদিনা স্টোরে গিয়েও দেখা যায় একই অবস্থা। সেখানেও নেই কোনো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। দোকানটির ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, এই বাজারে দীর্ঘদিন অগ্নিকান্ডের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। যে কারণে এ বিষয়ে আমরা চিন্তাও করিনি। এখন ভাবতে হচ্ছে।
ওই দোকানের বিপরীতে তোফায়েল স্টোরে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ঝুলানো রয়েছে একটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। দোকানের ম্যানেজার আনন্দ দাস বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নতুন আরেকটা এনে ঝুলিয়ে রেখেছি। তবে কীভাবে এটি বিপদকালীন সময় ব্যবহার করতে হয় তা কেউই জানেন না বলে তিনি জানান। শুধু বড়বাজার নয়, শহরের অন্যান্য মার্কেট ও বহুতল ভবনগুলোরও একই অবস্থা। বারবার অগ্নিকা-ের শিকার কালেক্টরেট মার্কেটের কোনো দোকানেও নেই নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। অথচ এই বাজারটিতে গত ৫ বছরে ৪ বার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে বলে জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, যশোরের বেশিরভাগ মার্কেট ও বহুতল ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা একেবারেই দুর্বল। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর বড়বাজার। বাজারটিতে অপরিকল্পিতভাবে মার্কেট গড়ে ওঠায় সেখানে কোনো গাড়ি প্রবেশের সুযোগ নেই। মার্কেটের পেছনে ভৈরব নদ থাকলেও গাড়ি প্রবেশের অবাধ সুযোগ না থাকায় সেখান থেকে দুর্ঘটনার সময় কোনো সুযোগ নেওয়া দুরুহ হয়ে পড়বে বলে আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকা-ের পর আমরা এ বিষয়ে সিরিয়াস রয়েছি। আমাদের অনুসন্ধান কর্মীরা খোঁজ নিচ্ছে কোন কোন ভবনে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। মার্কেটগুলোতেও কী অবস্থা আছে তাও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অগ্নি ঝুঁকিতে আমরা সবচেয়ে যে বিষয়টি সিরিয়াস দেখছি সেটি হলো পানির উৎস। শহরের যেসব পুকুর-খানাখন্দ ছিলো সেসব স্থানে এখন ভবন গড়ে উঠেছে। এজন্যে পানির সোর্স না থাকায় আমরা বড় বিপদে পড়ছি। সম্প্রতি চৌগাছা বাজারে আগুন নেভাতে গিয়ে পানির সমস্যায় পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে পানি নিয়ে সেখানে আগুন নেভানো হয় বলে তিনি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগুন লাগলে ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে কখন যাবে বা আগুন নেভাবে এসব চিন্তা পরের। আগে প্রত্যেকের প্রতিষ্ঠানে বা বাসভবনে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নইলে দুর্ঘটনা থেকে নিজেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।