যশোর এমএম কলেজে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নেই : ফাঁকা পড়ে আছে হল

0

 

শেখ জালাল উদ্দিন ॥ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে যশোর সরকারি এমএম কলেজের ছাত্রীরা। তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত হলটিতেও থাকছেন না। নিরাপত্তার অভাবে সাশ্রয়ী ছাত্রীনিবাস ছেড়ে তারা বেশি ভাড়া দিয়ে বাইরের মেসে থাকছেন। এ কারণে একটি ছাত্রীনিবাস কয়েক মাস ধরে খালি পড়ে রয়েছে। ছাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানে কলেজ প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
যশোর সরকারি এমএম কলেজে ৪০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। এটি দেশের অন্যতম বড় বিদ্যাপীঠ। শিক্ষকদের পাঠদান কৌশল, ভাল ফলাফলসহ নানা কারণে সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম রয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাসী ও বহিরাগতদের অপতৎপরতায় এ সুনাম ম্লান করে দিচ্ছে। দূর -দূরান্ত থেকে আসা ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে নিরাপদে বিচরণ করতে পারে না সন্ত্রাসী বখাটেদের অত্যাচারে।
কলেজের মোট ৫টি আবাসিক হল রয়েছে। এর মধ্যে ২টি ছাত্র ও ৩টি ছাত্রীনিবাস। তিনটির ছাত্রী হলে মোট ২শ ৯২টি আসন রয়েছে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া হলে ছাত্রী থাকলেও অধ্যাপিকা হামিদুর রহমান হলের ৮০টি আসনই ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
সূত্র জানান, ছাত্রী হলে প্রতিমাসের সিট ভাড়া প্রায় ৪শ টাকা। সে হিসেবে বছরে এককালীন ৪ হাজার ৬শ টাকা জমা দিতে হয়। অন্যদিকে একজন ছাত্রীকে মেসে থাকতে প্রতিমাসে অন্তত এক হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয়। যা দ্বিগুনেরও বেশি। তারপরও ছাত্রীরা কলেজের হলে থাকতে চান না। গত ৩১ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে অছাত্র বহিরাগত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী ও ইভটিজিংকারীদের অপতৎপরতা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করেছেন হলে থাকা ছাত্রীরা। আবেদনে তারা উল্লেখ করেছেন, বহিরাগত ও অছাত্ররা কলেজ ক্যাম্পাসের ছাত্রী নিবাসের কাছে পুরাতন বিজ্ঞান ভবন পুকুরপাড়ে বসে মাদক সেবন করে। ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। কয়েকদিন আগে ভুগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ব্যবহারিক পরীক্ষা চলাকালে এক ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়।
বিষয়টি তৎক্ষণিকভাবে কলেজ প্রশাসনকে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে ছাত্রীরা আবেদনে উল্লেখ করেছেন। তারা কলেজের সুষ্ঠু পরিবেশ বহিরাগত অছাত্রদের ক্যাম্পাসে বিচরণ বন্ধের দাবি জানিয়ে গত ১৪ মার্চ অধ্যক্ষ বরাবর আবারও একটি আবেদন করে। তারপরও কলেজের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে ছাত্রীদের অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও হয়রানি করার ঘটনায় যারা জড়িত তারা সকলেই ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত কিংবা তাদের ছত্রছায়ায় থেকে বেপরোয়া চলাচল করে। ইতিমধ্যে এর প্রমাণ ও মিলেছে ছাত্রলীগ এমএম কলেজ শাখার প্রচার সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায়। বহিরাগতদের এমন আচরণ ও হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে অধিকাংশ ছাত্রী হলে থাকতে চায় না। তারা কম ভাড়ার হল ছেড়ে মেসে থাকছে।
কলেজের ইসলামী ইতিহাসে বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্রী বলেন, মেসে খাওয়া খরচ বাদে মাসে প্রায় ১০০০ টাকা খরচ হয়। হলে থাকলে এর অর্ধেক খরচ হত। নিরাপত্তাহীনতা বলে হলে থাকা সম্ভব হয়নি।
কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান বলেন, এমএম কলেজ এখন সন্ত্রাসী বহিরাগতদের দখলে। বর্তমানে অধ্যক্ষ তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, মূলধারার ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে। তারা অধ্যক্ষের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছে। এখন তিনি মূলধারার ছাত্রলীগকে এড়িয়ে চলছেন এবং সন্ত্রাসী ও বহিরাগতদের প্রাধান্য দিচ্ছেন।
তৌহিদ আরও বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নেই। কলেজ প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণে ছাত্রী হল ফাঁকা পড়ে আছে। কলেজের ছাত্রী হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক শিরিন আক্তার বলেন, ছাত্রী হলে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে বহিরাগতদের দ্বারা উত্ত্যক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ছাত্রী সংকটের কারণে হল ফাঁকা রয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার ক্যাম্পাসে অছাত্র, বহিরাগত সন্ত্রাসী ও ইভটিজিংকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি সংক্রান্ত ছাত্রীদের আবেদনের কথা স্বীকার করে বলেন, কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্যে তিন স্তরের ব্যবস্থা আছে বলে অধ্যক্ষ দাবি করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাতে হল সুপার কোয়ার্টারে থাকেন না। তবে কোয়ার্টারে উপাধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষক থাকেন। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে কে কোন দলের বা গ্রুপের সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। সবাই আমার ছাত্র। তাদের স্বার্থে আমি কাজ করে যাচ্ছি।