এসএসসির ফরম পূরণের পর রতনকে বলা হল, সে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়!

0

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় ২০২৩ সালের এসএসসির ফরম পূরণের টাকা জমা দেয়ার পর রতন জানলো সে ওই স্কুলের শিক্ষার্থী নয়। টাকা জমার দশদিন পর এ শিক্ষার্থীকে প্রধান শিক্ষক বলেছেন তুমি স্কুলের শিক্ষার্থীই না, পড়তে হলে তোমাকে আবার নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হবে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছে নিরুপায় ওই শিক্ষার্থী । ঘটনাটি ঘটেছে চৌগাছা সরকারি মডেল শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ১৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগে রতন মাহমুদ বলেছে, সে একই বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে জেএসসি পাশ করেছে। জেএসসিতে তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিলো-২০১৩৬৫০০২২ এবং শ্রেণি রোল নম্বর-১০৮। একই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষা পাশের পর ৯ম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। শ্রেণি রোল নম্বর ছিলো-১০৮। ২০২১ সালে ৯ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ১০ম শ্রেণিতে তার রোল নম্বর হয় ১৫৩। একজন নিয়মিত ছাত্র হিসেবে বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমসহ শ্রেণি পরীক্ষা, অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা এবং ২০২২ সালের ১০ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্যে নির্বাচনী পরীক্ষায় দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর বোর্ডের ফরম পূরণের জন্য ২ হাজার ১১০ টাকা জমা দেয়। পরবর্তীতে তার রেজিস্ট্রেশন কার্ড না দিয়ে বোর্ড ফি’র টাকা ফেরত প্রদান করা হয়। বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জানালে তিনি বলেন,তুমি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র না, পড়তে হলে তোমাকে ৯ম শ্রেণিতে ফের ভর্তি হতে হবে।
রতন তার আবেদনে বলেছে, ‘আমি নিরুপায় হয়ে এই আবেদন করছি’। সে আরো জানায়, আমার পিতা ক্যান্সার আক্রান্ত। আমার মা পরের বাড়িতে কাজ করে আমার লেখাপড়ার খরচ চালান। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইউএনও স্যারের নিকট আবেদন জানিয়েছি। রতনের মা বেগম ফুলতুলি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী ক্যান্সারের রোগী। আমরা মুর্খ মানুষ। খুব কষ্টে ছেলেকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াচ্ছি। সে সব বিষয়ে পাশ করেছে। ফরম পূরণের টাকাও দিয়েছি। তবে পরীক্ষা দিতে না পারলে ওর এই দুই-তিন বছর কে ফিরিয়ে দেবে? বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রেশনের জন্য স্কুলের কয়েকজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা আমাকে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রেশনের সময় ছেলেটি এলাকায় ছিলোনা। তার সাথে যোগাযোগও করা যায়নি। এজন্য এমন ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে বোর্ডে যোগাযোগ করা হবে যেন ছেলেটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বোর্ডে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ছেলেটি বিদ্যালয়ের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির সকল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে অথচ তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি, এটা অবশ্যই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের ব্যর্থতা। তিনি দায়িত্বও নিতে চাননি। বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক নিজের ভুল স্বীকার করে বোর্ড চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করলেই সমাধান সম্ভব।

 

.