চৌগাছায় বোরোর খরচ নিয়ে শংকায় কৃষক

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় চলতি বোরো মৌসুমে বেশ আগে ভাগেই ধান রোপণের কাজ শুরু করেছেন চাষিরা। হাড় কাঁপানো শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে চাষিরা ক্ষেত প্রস্তুত করে চারা রোপণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক। বোরো মৌসুমে কৃষি উপকরণের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এ জনপদের বোরো চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে চৌগাছাতে ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হেক্টর জমির ধান রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস প্রায় সাড়ে ৭ হাজার চাষিকে প্রণোদনার নানা জাতের ধানের বীজ, সার ও কীটনাশক প্রদান করেছেন। উপজেলার সিংহঝুলী, পৌর এলাকার চানপুর, কুঠিপাড়া, জিওয়লগাড়ি, তারনিবাস, বেলেমাঠসহ বেশ কিছু গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে কৃষক বোরো চাষে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কথা হয় জিওয়লগাড়ি গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, বর্তমানে বোরো চাষে লাভ না লোকসান হবে এই ভাবনা নিয়ে চাষ শুরু করেছি। চলতি বছরে ৪ বিঘা জমিতে ধান লাগানো হচ্ছে। তবে সার কীটনাশকসহ সব কিছুরই দাম বেশি। সে কারণে ধান চাষ করে কৃষক কিভাবে লাভবান হবে আমার বুঝে আসে না। ওই মাঠে কৃষক আলতাফ হোসেন ৩ বিঘা, সাবেক কাউন্সিলর হাচানুর রহমান ৭ বিঘা, বিপুল হোসেন ১ বিঘা, লোকমান হোসেন ৫ বিঘা, শামছুল হক ১ বিঘা, আসাদুজ্জামান শান্তি ৩ বিঘা, জাহাঙ্গীর আলম ৫ বিঘা, স্বপন ৫ বিঘা, ওয়াসিম ১০ বিঘা, রিপন হোসেন ৪ বিঘা, মন্টু মিয়া ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপনে ক্ষেত প্রস্তুত করছেন। অনুরূপভাবে সিংহঝুলী গ্রামের কৃষক শাহীনুর রহমান ১২ বিঘা, চানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম ৭ বিঘা, কুঠিপাড়া গ্রামের হচেন আলী ৬ বিঘা ধান রোপণ করবেন। কৃষকরা জানান, এ বছর ১ বিঘা জমিতে ধান রোপণে কৃষকের ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এরমধ্যে জমি চাষে ১২শ, মই দেয়া বাবদ ৩শ, চারা রোপনে ১৫শ, আগাছা নিধনে ১২শ, সার কীটনাশকে ৪ থেকে ৫ হাজার, পানি বাবদ ৩ হাজার ৫শ, ধান কাটা ও বহন বাবদ ৬ হাজার টাকা খরচ আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কৃষকরা এ বছর নানা জাতের ধান চাষ করছেন। এরমধ্যে উফশি- ব্রি ধান ২৮, ৫০, ৫৮, ৬৩, ৮৯, ৮৮, ৮১, ৯২ এবং বঙ্গবন্ধু ১০০ জাতের ধান চাষ হচ্ছে। এর পাশাপাশি রড মিনিকেট ও সুভলতা ধানের চাষও বেশ লক্ষণীয়। আবার অনেক চাষি হাইব্রিড জাত তেজগোল্ড, ইস্পাহানি, হাইব্রিড-৩ ও ৫ জাতের ধানের চাষ করছেন বলে জানা গেছে। সিংহঝুলী গ্রামের কৃষক শাহিনুর রহমান শাহিন, চানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বোরো ও আমন মৌসুমে ১০-১২ বিঘা করে ধান রোপণ করি। বিগত বছরগুলোতে কৃষি উপকরণের দাম কিছুটা সহনশীল পর্যায়ে ছিলো। এ বছর অনেক বেড়ে গেছে। কৃষকের বিষয়টি বিবেচনা করে এসকল জিনিসের দাম কমানো খুবই জরুরি। অনেক কৃষককে ধারদেনা করে ফসল উৎপাদনের পরপরই তা কম মূল্যে বিক্রি করে দেনা শোধ করতে হয়। কৃষক যে পরিমাণ কষ্ট করেন তার বিন্দু মাত্র সুফল পাননা। অথচ কৃষকের হাত থেকে ধান ব্যবসায়ীদের হাতে গেলে দাম বেড়ে যায় এবং লাভবান হয় ব্যবসায়ী। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, প্রতি বছরের মত এবছরও ব্যাপকভাবে বোরো চাষ হবে বলে মনে করছি। তবে ভুট্টা চাষ বেড়ে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পুরনে হয়ত কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে। কৃষি অফিস ইতোমধ্যে প্রান্তিক চাষিদের সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা দিয়েছে। এছাড়া ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে সার বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দরে সার বিক্রি করা হলে ওই সকল ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।