রামপালে বালি উত্তোলনের মহোৎসব

0

এমএ সবুর রানা, রামপাল (বাগেরহাট) ॥ বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার নির্মাণাধীন খাঁন জাহান আলী বিমান বন্দরসহ বেশ কিছু এলাকায় একাধিক মিনি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে ভূগর্ভ থেকে বালি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে, মামলা করেও বালি খেকোদের কোনভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই উপজেলার কোথাও না কোথাও বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। খাঁন জাহান আলী বিমান বন্দরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় মিনি ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করায় নির্মানাধীন খাঁন জাহান আলী বিমান বন্দরসহ এই জনপদের অধিকাংশ এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। আর এই বালি উত্তোলন করে একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নের সোনাতুনিয়া চন্দ্র মহলের উত্তর পাশে গোলবুনিয়া নামক একটি খালে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে মিনি ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে আশে পাশের বিভিন্ন নিচু জমি, ডোবা, পুকুর, নালা, রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘরের চারপাশ ভরাট করা হচ্ছে। দূরত্ব ভেদে উত্তোলন করা প্রতি ঘনফুট বালি ৬ টাকা থেকে ১০-১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে হোগলডাঙ্গার আইয়ুব পাটয়ারী, হাতিরবেড়র আল আমীন, গিলাতলার তেঘরিয়ার বিলে ও শ্রীফলতলা পূর্বপাশের বিলে ড্রেজার বসিয়ে ইচ্ছামত বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। বালি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ১০ দিন পূর্বে শোলাকুড়ার আজমাইন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বাইনতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী তহশীলদার পলাশ কুমার দাস। আজমাইন নামের ওই ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে আদালতে ১৪৪ ধারার মামলা চলাকালীন অবৈধ মিনি ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলনের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট তহশীলদার নোটিশ করতে গেলে তাকে মারপিট, সরকারি কাজে বাধাদান ও হত্যার হুমকিসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদান করেন আজমাইন। অভিযোগের বিষয় আজমাইনের নিকট জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। এনামুল হোসেন নামের এক ইউপি সদস্য বলেন, বিমান বন্দরে মাটি ভরাটের জন্য ভোলা নদী ও তার আশেপাশে ব্যক্তিগত জমিতে পাশাপাশি ৬টির মতো ড্রেজার বসিয়ে দেদারছে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। রামপাল সদরের সিকি এলাকার বাসিন্দা মো. ফরিদ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে ওই বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্তত ৫/৬ টি গ্রামের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোন সময় ভূমি ধস হলে বাড়ি ঘরের পাশাপাশি বিমান বন্দর এলাকায় ব্যপক ক্ষতি হতে পারে।
এ ব্যপারে স্থানীয়ভাবে দায়িত্বে থাকা সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশলী তুষার বাবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফরিদ সিভিল এভিয়েশনের কোন লোক নয়। তিনি ধোকাবাজ লোক। তাকে বিমান বন্দর এলাকা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিভিল এভিয়েশনের লোক পরিচয় দিয়ে বিমান বন্দর এলাকার সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছেন। তিনি এখন বালি ভরাটের কাজ করছেন বলে শুনেছি। সরকারি নদী থেকে বালি তোলার কথা নয়। ফরিদ উদ্দিনের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিফুট বালি ৬ টাকায় উত্তোলন করা হচ্ছে। বালি উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে জমির মালিকদের পক্ষ থেকে দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বালি উত্তোলন করতে বলেছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সি বোরহান উদ্দিন বলেন, আমার জানা মতে সরকারিভাবে প্রতি ঘনফুট মোটা দানার বালি ২৬ টাকায় কিনে তা দিয়ে ভরাট করার কথা রয়েছে। তা না করে সরকারি নদী-খাল ও ব্যক্তিগত জমি থেকে ঠিকাদার ফরিদকে দিয়ে মাত্র ৬ টাকায় প্রতি ঘনফুট বালি উত্তোলন করছে। প্রতি ঘনফুট বালিতে ২১ টাকা মুনাফা নিচ্ছেন ফরিদ। তিনি আরও বলেন, নদী থেকে বালি উত্তোলনের বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)- কে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, একটা পক্ষ জেলা প্রশাসকের অনুমতি আছে এমন মিথ্যা কথা বলে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করছিল। খবর পেয়ে তা বন্ধ করা হয়েছে। এখন কোথাও উত্তোলন হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ সালাউদ্দিন দিপু বলেন মাত্র কয়েকদিন আগে ওই এলাকায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ৪/৫ টি ড্রেজার ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। আবারো অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান বলেন, রামপালে কোন বালি মহল নেই। কোন ইজারাও হয়নি। কাউকে বালি উত্তোলনের অনুমতিও দেয়া হয়নি। আপনারা অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের তথ্য দিন এবং তাদের বিরুদ্ধে লিখুন। আমরা ধারাবাহিকভাবে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।