শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম নাগালের বাইরে

0

আকরামুজ্জামান ॥ শীত আসতে বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। তবে এরই মধ্যে যশোরের বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতের সবজি। প্রতিটি দোকানে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম রয়েছে আগের মতই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার জন্য এ বছর উপযুক্ত সময়ে শীতের সবজি চাষ শুরু না হওয়ায় বাজারে প্রায় এক মাস পেরিয়ে শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে। এ কারণেই দাম তুলনামূলক বেশি। আর ক্রেতাদের অভিযোগ বাজারের অন্যসব পণ্যের সাথে তাল মিলিয়েই মৌসুমী সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
দেশের সবজি উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য জেলার মধ্যে যশোর হচ্ছে অন্যতম জেলা। দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ সবজিই এ জেলা থেকে সরবরাহ হয় । প্রায় বছরজুড়েই জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে নানা জাতের সবজি চাষ হয়। তবে শীত মৌসুমকে টার্গেট করে এ জেলার চাষিরা প্রচুর পরিমাণ সবজি চাষ করলেও এবছর প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা অনেক পিছিয়ে পড়ে। অন্যান্য বছরে এই সময়ে বাজারগুলোতে আগাম জাতের শীতকালীন সবজিতে সয়লাব হয়ে গেলেও দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে উৎপাদন সময় প্রায় একমাস পিছিয়ে অবশেষে বাজারে আসতে শুরু করেছে কাঙ্খিত সেই শীতের সবজি। তবে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও দামে ক্রেতাদের অসন্তুষ্টি সেই আগের মতই। এ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমত অসন্তোষ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে যশোর বড় বাজারে সবজি মোকামে দেখা যায়, পাইকার ও খুচরা বাজারে প্রচুর শীতের সবজি উঠেছে। লাউ, মিষ্টি কুমড়ো, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বরবটি, শিমসহ আরও অনেক শীতের সবজি দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তবে দাম তুলনামূলক আগের মতই।
বাজারে কথা হয়, শাহাজান আলী নামে একজন ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে এই সময়ে বাজারে সবজির দাম অনেক কম ছিলো। কিন্তু এখন দেখছি ঊল্টোটা। তিনি বলেন, মৌসুমী সবজি কোনটিই ৫০ থেকে ৬০ টাকার নিচে নেই। এক কেজি বাঁধাকপি, ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। শিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। সবজি কিনতে গেলে অন্য কোনো বাজার করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে তিনি জানান।
কথা হয় আজগর আলী নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের সাথে। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের অন্য সব সামগ্রীর সাথে প্রায় বছরজুড়েই সবজির দাম আকাশছোঁয়া। এখন শীতের সবজি বাজারে উঠলেও তা কমছেনা। তিনি বলেন, সবজি কিনতে গেলে আর কোনো বাজার করা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেই এভাবে সবজির দাম উর্ধ্বমুখি রেখেছে বলে তিনি দাবি করেন।
তবে খুচরো ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছরে এই সময়টা বাজারে শীতের সবজি সয়লাব হয়ে গেলেও এখন সরবরাহ তুলনামূলক অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সবজির উৎপাদন কম হওয়ায় বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে আসছেনা বলে তারা দাবি করেন।
আব্দুর রশিদ নামে একজন খুচরো ব্যবসায়ী বলেন, অন্যান্য বছরে এই সময়ে শীতের আগাম জাতের সবজিতে ভরপুর থাকতো। কিন্তু সবজি চাষের মূল সময়ে এ বছর যশোরে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। এ কারণে সবজির উৎপাদন ছিলোনা বললেই চলে। যে কারণে গত কয়েক মাস আগে থেকেই সবজির দাম চড়া। তিনি বলেন, খুচরো বাজারে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। আর ১০/১৫ দিনের মধ্যে পুরোদমে শীতের সবজি বাজারে উঠবে। তখন সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তিনি দাবি করেন।
বড়বাজারের মিতালী ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী (আড়ৎদার) মো. খোকন বলেন, এ বছর সবজি উৎপাদন কম হচ্ছে। যে কারণে জেলার চুড়ামনকাটি, সাতমাইলসহ যেসকল সবজি মোকাম রয়েছে সেখানেও সবজির দাম বাড়তিতে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে আমরা আড়ৎদাররাও বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি বলেন, সবজির দাম হয়তো এবছর তেমন একটা কম হবেনা। এর বড় কারণ হলো, সবজি উৎপাদনের খরচের সাথে পরিবহন, শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবজির বাজারেও এর প্রভাব পড়তে আছে।