নিয়োগের নয় মাসেও বেতন পাননি ঝিকরগাছার ৭৫ শিক্ষক-সুপারভাইজার

0

 

তরিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর)॥ যশোরের ঝিকরগাছায় নিয়োগের সাড়ে ৯ মাস পার হলেও এখনো বেতন পাননি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো প্রকল্পের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনণালয়াধীন ৭০জন শিক্ষক ও ৫জন সুপারভাইজার। এছাড়া ভাড়া করা স্কুলের কোন মালিক এখনো পর্যন্ত ঘর ভাড়া পাননি।
আউট অব-স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রামের আওতাধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় যশোরের এনজিও দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা পরিচালিত ঝিকরগাছার এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর উদ্বোধনের মাধ্যেমে ঝিকরগাছায় ৭০টি স্কুল ২৫ থেকে ৩০ জন ৮ থেকে ১৪ বছরের ঝরে পড়া শিক্ষার্থী নিয়ে তাদের ক্লাস শুরু করে। উদ্বোধনের সময় এনজিও দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য এক মাসের শিক্ষা উপকরণ বই, খাতা, পেন্সিল, ইরেজার, কার্টার এবং স্কুলের জন্য একটি জাতীয় পতাকা, একটি সাইনবোর্ড, ডাস্টার ও ৬টি করে পাটি দেয়া হয়। ৪২ মাস মেয়াদী এই প্রকল্পের জন্য গত সাড়ে ৯মাস ধরে স্কুলগুলোতে আর কোন শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়নি। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে গতমাসে শিক্ষার্থীদের জন্য সামান্য কিছু খাতা, পেন্সিল দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কিছু কিছু শিক্ষক নিজেদের খরচে শিক্ষার্থীদের সামান্য শিক্ষা উপকরণ ও ভাড়া করা প্রতিষ্ঠানের ফ্যান ও লাইটের বিদ্যুৎ বিল দিয়ে স্কুলগুলো এখনো চলমান রাখলেও দীর্ঘদিন ধরে ঘর ভাড়া না পেয়ে অনেক ঘর মালিক ঘর ছেড়ে দিতে শিক্ষকদের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে আসছেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের বেতন না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কীভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হবে? গত সাড়ে ৯ মাসের মধ্যে তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। পূর্বের অভিজ্ঞতা ও সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পাঠদান কর্মসূচি মাধ্যমে তারা শিক্ষাক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
শিক্ষক ও সুপারভাইজাররা কেন বেতন পাচ্ছেন না এ ব্যাপারে জেলা মনিটরিং অফিসার আমিনুর রহমান, ঝিকরগাছা উপজেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাফর ইকবালের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক মহোদয় ছাড়পত্র দিয়েছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা সমুদয় বেতন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ ও ঘর মালিকরা ভাড়া পেয়ে যাবেন।
তবে দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানার ছেলে প্রকল্পের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার জোবায়ের হোসেন চয়নের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদকর্মীর পরিচয় পেয়ে বলেন, প্রকল্পের মহাপরিচালক ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এডির সাথে কথা বলুন। এ কথা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রকল্পের টাকা ছাড় না হওয়ায় শিক্ষক ও সুপারভাইজাররা এখনো বেতন পাননি। বেতন না পাওয়ার কারণে স্কুল বন্ধের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলগুলোর তালিকা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্পের উপজেলা সভাপতি মাহবুবুল হক বলেন, প্রকল্পের শুরুতে শিক্ষক নিয়োগের সময় প্রকল্পের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের পক্ষ থেকে খুব বেশি তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেননি। সম্প্রতি একটি নির্দেশনায় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও সমাজসেবা অফিসারের মাধ্যমে এসব স্কুল মনিটরিং করানো হয়েছে। তবে শিক্ষকরা বেতন না পাওয়া ও ঘরমালিকদের ভাড়াসহ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ সময়মত দিতে না পারার কারণে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বলেও জানান তিনি।