কপোতাক্ষের ভাঙনের হুমকির মুখে কপিলমুনির বিস্তীর্ণ অঞ্চল

0

 

কপিলমুনি (খুলনা) সংবাদদাতা॥ প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে একে একে হারিয়ে যেতে বসেছে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীমালা। যার ধারাবাহিকতায় বেশ আগেই যুক্ত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কপোতাক্ষ নদ। প্রথমে আগ্রাসী কপোতাক্ষের ভাঙন ও পরে নাব্য হ্রাসে নদী তীরে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর পড়ে বিরুপ প্রভাব। ভিটা-বাড়ি হারিয়ে বহু মানুষ উদ্ববাস্তু হয়েছে। জীবিকার তাগিদে পেশা বদলও ঘটেছে অনেকের। এরপর গণদাবির প্রেক্ষিতে সরকার ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খনন করে। নদের একাংশ ফিরে পায় তার হারানো যৌবন। তবে কপোতাক্ষে ফের ভাঙনে নতুন করে উদ্বাস্তু হচ্ছে নদী তীরে বসবাসকারী বহু পরিবার। হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের বহু উন্নয়ন প্রকল্প।
৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন (সি আর এম আই ডিপি) প্রকল্পের নির্মাণাধীন চার তলা ফাউন্ডেশন কাশিমনগরহাট দুইতলা বিশিষ্ট গ্রামীণ মার্কেট বিল্ডিং, মুজিবশত বর্ষের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আবাসন প্রকল্প চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানকার জেলে পল্লীর অন্তত ৭০ টি পরিবার ভাঙনের মুখে অন্যত্র চলে গেছে। নীগর্ভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে আরো ২০ টি পরিবারের বসতভিটা।
কপিলমুনির কাশিমনগর জেলে পল্লীর বাসিন্দা উত্তম বিশ্বাস জানান, এক শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসছেন। তবে ইতোমধ্যে তাদেরসহ বহু পরিবারের মূল বসতভিটা গিলে খেয়েছে আগ্রাসী কপোতাক্ষ। অনেকেই পেশা বদলে অন্যত্র চলে গেছে। উদ্বাস্তু হয়েছে অনেক পরিবার। তার নিজেরও দু’বার বসতি বদল হয়েছে। রাড়ুলীর জেলে পল্লীর বাসিন্দা ভূধর বিশ্বাস বলেন, আমার বাবা ও দাদুরা প্রায় ১শ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছেন। নদীর কূলে ১শ থেকে দেড়শ বিঘা জমি ছিলো। যেখানে দেড়শ’রও বেশি পরিবারের বসতি ছিল। তবে নদের অব্যাহত ভাঙনের মুখে সেখানকার ৭০ টিরও বেশি পরিবারের ঘর কেড়ে নিয়েছে আগ্রাসী কপোতাক্ষ।
একই এলাকার লিপিকা বিশ্বাস জানান, রাতে জোয়ারের সময় ভয়ে বাচ্চাদের নিয়ে বসে থাকেন ভাটার অপেক্ষায়। এরপর ভাটা আসলে ঘুমাতে যান তারা।
কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার বলেন, রামনাথপুর, আগড়ঘাটা, ভেদামারীসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে কপোতাক্ষের ভাঙনে সেখানকার বসতিসহ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হলেও সেখানকার নদী ভাঙন প্রতিরোধে কার্যত কোন সরকার এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
কাশিমনগর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ রবিউল ইসলাম বলেন, কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙনে নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বনায়ন প্রকল্প, হাট-বাজারের সিংহ ভাগ ইতোমধ্যে কপোতাক্ষে বিলীন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাইকগাছা উপজেলা উপসহকরী প্রকৌশলী রাজু আহম্মদ বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প আওতায় নিয়ে ইতোমধ্যে কপোতাক্ষের ভাঙ্গনকবলিত কাশিমনগর এলাকায় ২০০ মিটার, গোলাবাটি আশ্রয়ণ এলাকায় ৩০০ মিটার ও মাহমুদকাটিতে সাড়ে ৩ শ’ মিটার এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।