বাগেরহাট সংবাদদাতা ॥ বাগেরহাট বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফোরহান খানের (১৯) আঁকা ছবি ‘বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ এবং পবিত্র ঈদুল ফিতর-২০২২’ এর শুভেচ্ছা কার্ডে ছাপা হয়েছে। এই ছবির সম্মানি হিসেবে ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ থেকে লাখ টাকা প্রদান করা হবে ফারহানকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার আফরোজা বিনতে মনসুর গাজী লিপি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই সম্মানির কথা জানানো হয়।
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী কিশোর ফারহানের এমন সফলতায় আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন স্বজনরা। শিক্ষকদের দাবি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক গাইড লাইন পেলে বিশ্বমানের চিত্রকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ফারহানের। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ফারহান খান বাগেরহাট শহরের কেবিবাজার এলাকার মোশারেফ খান ও রেক্সোনার ছোট ছেলে। জন্মের পরেই ছেলের সমস্যা বুঝতে পেরেছিলেন মা । ছেলেকে সুস্থ করতে ঘুরেছেন বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু কোনো ওষুধ ফারহানকে সুস্থ করতে পারেনি। তারপরও থেমে থাকেনি ফারহানের পরিবার। ছেলেকে শিক্ষিত করতে ভর্তি করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দুই বছর বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে তালমিলিয়ে পড়াশুনা চালাতে পারেননি ফারহান খান। পরবর্তীতে বাগেরহাট বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ভর্তি করা হয় তাকে। কথা বলা ও শ্রবণ শক্তি না থাকলেও ইশারায় সবকিছু বুঝে নেয় ফারহান। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে তার দারুণ সখ্যতা রয়েছে। সহপাঠীদের সাথে হেসে খেলে দিন যায় তার। বাক এবং শ্রবণ শক্তি না থাকার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও কিছুটা
দুর্বল সে। তাইতো সব সময় ছেলের সাথে সাথে থাকতে হয় মাকে। মা রেক্সোনা বলেন, আমার ছোটবেলা থেকে ও ছবি আঁকত। মাটি ও চক দিয়ে ছবি একে অনেক দেওয়াল নষ্ট করেছে সে। তারপরও আমি তাকে উৎসাহ দিয়েছি। এবার আল্লাহর ইচ্ছায় জাতীয় পর্যায়ে ‘বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ এবং পবিত্র ঈদুল ফিতর-২০২২’ এর শুভেচ্ছা কার্ডে আমার ফারহানের ছবি ছাপা হয়েছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি। এর আগেও ফারহান স্কুল, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে। প্রতিটা পুরস্কারে ও নিজেকে আলাদাভাবে খুঁজে পায়। যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন ওর সুখের জন্য সবকিছু করে যাব। সরকারিভাবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে আমার ফারহানকে চিত্রাঙ্কন শেখালে আমার মনে হয় ও বিখ্যাত চিত্রকর হতে পারত।
বাগেরহাট বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দিপান্বিতা পাল বলেন, ফারহান অনেক শান্তশিষ্ট একটি ছেলে। ইশারার মাধ্যমে সে সবকিছু বলে। শেখার জন্য নিজে নিজে অনেক চেষ্টা করে। ওর পুরস্কার পাওয়ায় আমরা সবাই অনেক খুশি হয়েছি।
বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অ্যাড. মীর শওকাত আলী বাদশাহ বলেন, প্রতিবন্ধীরা কখনও বোঝা নয়। সঠিক পরামর্শ ও উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এরাও অনেক ভালো কিছু করতে পারে। আমাদের শিক্ষার্থী ফারহান খান এর জলন্ত প্রমাণ।