দারিদ্র্যের কাছে হার না মানা শ্যামনগরের ফুলঝুরি

0

শেখ আব্দুল হাকিম, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)॥ সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে অবস্থিত মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রাম। এই গ্রামের জেলেপল্লীতে বসবাস করেন স্বপন সরদার। তার পরিবারে দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ফুলঝুরি ছোট। তার পিতা সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ ধরে আর মা গৃহিনী। ২০১৮ সালে ৭ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর অভাবি সংসারে আর পড়া লেখাপড়ার সৌভাগ্য হয়নি ফুলঝুরির।
অভাব অনটনের সংসারে পড়ালেখা করতে না পেরে সে পিতার কাকড়া ও মাছ ধরা পেশায় সহযোগিতা করতো। একসময় জানতে পারে উত্তরণ (এনজিও) সংস্থা মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে ঝরে পড়া শ্রমজীবী শিশুদের পড়ালোখার জন্য স্কুল লার্নিং সেন্টার করা হয়েছে। পড়ালেখা শেখার আগ্রহী হয়ে ওঠে অনেক শিশু। এর মধ্যে ফুলঝুরি অন্যতম। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হয় এবং পড়ালেখার পাশাপাশি দর্জি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং দর্জি পেশা ধরে রাখতে নব উদ্যমে কাজ শুরু করে ফুলঝুরি। হার মানেনি দারিদ্র্যের কাছে। তার দৈনিক ১০০ থেকে ১২০ টাকা আয় হয়।
নির্মম বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার পথে হাঁটছে সে । সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দারিদ্র্য দূর করে পরিবারের মুখে হাসি ফোঁটানোই তার মূল লক্ষ্য। এজন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি দর্জির কাজ করে সার্থক হয়েছে। স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে চলছে ফুলঝুরি। জীবনযুদ্ধে নেমে শত বাধা পেরিয়ে সে দেখিয়েছে বিশেষ কৃতিত্ব।
ফুলঝুরি জানায়, লেখাপড়ার পাশাপাশি টেইলার্সে কাজ করবে। ভালভাবে কাজ শিখে সে সফল নারী দর্জি হয়ে নিজেই টেইলার্সের মালিক হবে। পিতা-মায়ের সংসারের কষ্ট দূর করবে। যতদিন নিজে একটি দোকান করতে না পারবে ততদিন এভাবেই কাজ করে যাবে। নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে চায় সে।
উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের ব্যবস্থাপক নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনি, গাবুরা ও কাশিমাড়ী ইউনিয়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই চারটি ইউনিয়নের চারটি লার্নিং সেন্টারে ৩৫০ জন শ্রমজীবী শিশুর শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান। এই শিশুরা নিয়মিত লার্নিং সেন্টারে এসে লেখাপড়া করছে। এরমধ্যে ২৫ জন শিশু ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুইং মেশিন, টেইলরিং ও ২৫ জন ইলেকট্রনিকস, মোবাইল সার্ভিসিংয়ের বিষয়ে তিন মাসের কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। এছাড়া সকল শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়।
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা বলেন, উত্তরণের এই কার্যক্রম উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ঝরে পড়া শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সোহাগ হোসেন জানান, মূলত শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা। এটি পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস, মোবাইল সার্ভিসিং,সুইং মেশিন ও টেইলরিং প্রশিক্ষণ একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ বল মনে করেন তিনি।