সাংবাদিক শামছুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী আজ

0

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রখ্যাত সাংবাদিক শামছুর রহমানের আজ শনিবার তার ২১তম শাহাদত বার্ষিকী। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাত আটটার দিকে দৈনিক জনকণ্ঠের যশোর দড়াটানা অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন তিনি।
সাংবাদিকতার একটা আর্ট আছে তা তার লেখনির মাধ্যমে শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান তা বুঝিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তার দক্ষতায় তুষ্ট হয়ে তাকে দৈনিক জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধির মর্যাদা দেয়া হয়। এর আগে তিনি ছিলেন দৈনিক বাংলার স্টাফ রিপোর্টার। শহীদ শামছুর রহমান একধারে ছিলেন সাংবাদিক ও লেখক। তার সময়ে তিনিই ছিলেন ঢাকার কোনো পত্রিকার রাজধানীর বাইরে প্রথম বিশেষ প্রতিনিধি। এছাড়া তিনি বিবিসি বাংলা সার্ভিসের প্রদায়ক ছিলেন।
যশোরের আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল খুন হবার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। পরে বর্ধিত তদন্ত করে ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়। ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শহীদ শামছুর রহমানের সহধর্মিনী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।
আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছেন। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সাথে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্য রয়েছে। ফলে তার (বাদীর) পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এই আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ‘মামলাটি কেনো যশোরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না’ তার জন্যে সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করেন। এরপর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সরকার উদ্যোগ নিয়ে উচ্চ আদালতে বাদীর আপিল এবং ফারাজী আজমল হোসেনের রিট নিস্পত্তি করলে নি¤œ আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা না আসলে নি¤œ আদালতে এই মামলার কোনো কার্যক্রমই পরিচালনা করা যাবে না।
উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর এম ইদ্রিস আলী জানান, আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তি হলে মামলার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো বহু বছর ধরেই হাইকোর্টের নির্দেশনায় এই মামলার কার্যক্রম বন্ধ আছে।
নিহতের সহোদর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন জেইউজের সাবেক সভাপতি সাজেদ রহমান জানান, একাধিক বার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতকালে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিটি গুরুত্বের সাথে তোলা হয়। এছাড়া তারা একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছেন। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হৃদরোগে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন।
শামছুর রহমানের ২১তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার যশোরে বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রেসক্লাব যশোর, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর,যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন ও যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এদিন সকালে প্রেসক্লাবে জমায়েত হয়ে কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এরপর শোকযাত্রাসহকারে শহীদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবে। পরে প্রেসক্লাবের আয়োজনে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল এবং স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।