যশোরের ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ ও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের অধ্যক্ষ জিএম ইকবাল হোসেন ও উপাধ্যক্ষ মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ, একই সাথে দুই পদের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ এবং বিধি উপেক্ষা করে আর্থিক সুবিধা ভোগের অভিযোগ উঠেছে। যদিও অধ্যক্ষ জিএম ইকবাল হোসেন এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ জিএম ইকবাল হোসেন সমাজকর্ম বিষয়ের এমপিওভুক্ত প্রভাষক ছিলেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে তিনি কলেজের উপাধ্যক্ষের শূন্য পদে যোগদান করেন। অনৈতিক পন্থায় তিনি উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেন। কিন্তু তিনি সমাজকর্ম বিষয়ের প্রভাষক পদ থেকে অব্যাহতি না নিয়ে ওই পদের সরকারি ভাতা গ্রহণ করেন। পাশাপাশি উপাধ্যক্ষ হিসেবে কলেজের আর্থিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন। যা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর ১১.১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একই সাথে একাধিক কোনো পদে/চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। এটি তদন্তে প্রমাণিত হলে সরকার তার এমপিও বাতিলসহ দায়ী ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’ ১১.১৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা উচ্চতর পদে যোগদান করলে যোগদানের তারিখ থেকে পূর্ববর্তী পদের বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারবেন না।’ অথচ জিএম ইকবাল হোসেন উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেওয়ার পর এই পদের কলেজের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন এবং সমাজকর্ম বিষয়ের এমপিও’র সরকারি ভাতাও গ্রহণ করেছেন। এরপর ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় একটি সংবাদপত্রে কলেজের অধ্যক্ষের শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে জিএম ইকবাল হোসেন ওই পদের জন্য আবেদন করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিলো, সরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক একজন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হবে।
সূত্রটি জানায়, ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি কলেজ। ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হতে গেলে বিধি মোতাবেক ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু জিএম ইকবাল হোসেন যখন অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেন তখন তার অভিজ্ঞতার বয়স ৭ মাস ঘাটতি ছিলো। অর্থাৎ ১৫ বছর হয়নি। তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বিধিবহির্ভূতভাবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এছাড়া নিয়োগ কমিটিকে ম্যানেজ করে ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ দেখিয়ে অধ্যক্ষ পদের এমপিওভুক্ত করে নিয়ে আসেন, যা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত।
অধ্যক্ষ জিএম ইকবাল হোসেন এ বিষয়ে দৈনিক লোকসমাজকে বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়। তিনি একই সাথে দুটি পদের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেননি। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভের পর তিনি সমাজকর্ম বিষয়ের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৫ বছর নয়, অধ্যক্ষ পদের জন্য ১২ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। যা তার রয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, জিএম ইকবাল হোসেন অধ্যক্ষ হওয়ার পর একই কলেজের ইংরেজির এমপিওভুক্ত প্রভাষক মঞ্জুরুল ইসলামকে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি (মঞ্জুরুল ইসলাম) ২০১৫ সালের ১০ মে উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করলেও অদ্যাবধি ইংরেজি বিষয়ের পদ থেকে অব্যাহতি নেননি। এমনকী তিনি ইংরেজি প্রভাষক পদের এমপিওভুক্তির সরকারি বেতন-ভাতা গ্রহণ করে চলেছেন। একই সাথে তিনি উপাধ্যক্ষ হিসেবে কলেজের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন।
এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ জিএম ইকবাল হোসেন জানান, মঞ্জুরুল ইসলামকে গভর্নিং বডি যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। বর্তমান উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তাও সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে বর্তমান অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষকের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ, বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি ও কলেজের আর্থিক সুবিধা গ্রহণের যথাযথ তদন্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে গত ১৮ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঘোপ এলাকার এক ব্যক্তি।