অভয়নগরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য মোটা অংকের টাকা নিয়ে ম্যানেজ মিশনে নেমেছেন প্রধান শিক্ষক আমিরুল!

0

স্টাফ রিপোর্টার, অভয়নগর (যশোর) ।। যশোরের অভয়নগর উপজেলার বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী এবং অভিভাবকমহল ফুঁসে উঠায় এবং এ সংক্রান্ত সংবাদ বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ম্যানেজ মিশনে নেমেছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমিরুল ইসলাম। তিনি পত্রিকায় প্রতিবাদ বিজ্ঞাপন দেয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও ম্যানেজ করার মিশন হাতে নিয়েছেন। সেই সাথে এলাকার কতিপয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকেও ম্যানেজ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে তিনি ইতিমধ্যে স্থানীয় কয়েকজনকে ভুরিভোজও করিয়েছেন।
আর এ ম্যানেজ মিশনের বিষয়টি বিদ্যালয়ের খোদ সভাপতির বক্তব্যেও বেরিয়ে এসেছে। ইতিপূর্বে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কাশেম মোড়ল সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে বন্ধ করে রাখলেও গতকাল বুধবার ফোন রিসিভ করে বক্তব্য দেন। তিনি আয়া পদে চাকরি দেয়ার অঙ্গিকার করে ভূক্তভোগী মাহাবুর রহমানের সাথে ৮ লাখ টাকার চুক্তি ও মসজিদে বসে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে এ প্রতিবেদককে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, পত্রিকায় প্রতিবাদ দেয়া হয়েছে। অন্য পত্রিকা ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতেও প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। টাকা পয়সা যেখানে যা লাগবে খরচ করে সবদিক ম্যানেজ করার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষক নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বরাবরের ন্যায় টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং বিদ্যালয়ে তার কার্যালয়ে চা আপ্যায়নের দাওয়াত দেন।
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী মাহাবুর রহমান তার স্ত্রীকে বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়া পদে চাকরি দেয়ার জন্য একবার আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেই। কবে কখন কার হাতে টাকা দিয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে তার স্ত্রী চাকরি না পাওয়ার পর একবার এসেছিলেন। তখন আমি বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে সরাসরি কথা বলি। তখন সভাপতি ৫ লাখ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। এবং মাহাবুরের স্ত্রীকে অন্য একটি পদে চাকরির ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এর বেশি কিছু তার জানা নেই বলে জানান এ চেয়ারম্যান।
বিদ্যালয়ের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, মাহাবুরের স্ত্রীকে আয়া পদে চাকরি দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। কিন্তু বিশেষ কোন ব্যক্তির সুপারিশের কারনে অন্য একজনকে আয়া পদে চাকরি দিতে তারা বাধ্য হন। সূত্রটি আরও জানায়, নিয়োগ বাণিজ্যের পর স্থানীয় একটি মহল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্বের নিয়োগ বানচালের চেষ্টা করছে।
এদিকে ভূক্তভোগী মাহাবুরের সাথে কথা বললে তিনি জানান, গত দুই দিন আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এলাকার কতিপয় ব্যক্তিকে ম্যানেজ করতে নিজ বাড়িতে তাদের ভূরিভোজ করিয়েছেন। তাছাড়া বিভিন্ন মহলে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এবং এলাকার যারা আমাকে সাহস জুগিয়ে পাশে দাড়িয়েছেন তাদেরও ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। এক প্রশ্নে মাহাবুর রহমান বলেন, শেষ সম্বল ৯ শতক জমি, গোয়ালের গরু ও স্ত্রীর যৎসামান্য অলংকার বিক্রি করে টাকা দিয়েছি। মসজিদে বসে চাকরি দেয়ার অঙ্গীকার করে তারা টাকা নিয়েছে। এখন আমি নিঃস্ব। আমার স্ত্রী স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় বাবুর্চির কাজ করছে। দুইটি সন্তান নিয়ে চরম দুরবস্থায় আছি। তবু আমি এই অন্যায়ের বিচার পেতে যতদূর যেতে হয় যাবো। প্রয়োজনে মামলা করবো।
উল্লেখ্য, উপজেলার বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়াসহ তিনটি পদে সম্প্রতি নিয়োগ হয়েছে। অভিযোগ উঠে নিয়োগের প্রাক্কালে আয়া পদে মাহাবুর রহমানের স্ত্রীকে চাকরি দিতে আট লাখ টাকা চুক্তি করেন বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ কমিটির সকলে। এবং অন্য দুই পদে ১২ লাখ করে চুক্তি করেন। সে মোতাবেক জমি বিক্রি করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির হাতে সবার উপস্থিতিতে মসজিদে বসে টাকা দেন মাহাবুর। কিন্তু তার স্ত্রীকে চাকরি না দিয়ে ১০ লাখ টাকায় অন্য একজনকে ওই পদে চাকরি দেয়া হয় বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় স্থানীয় অভিভাবক ও এলাকাবাসী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই ম্যানেজ মিশনে নেমেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম।
নজরুল ইসলাম মল্লিক
২৯-০৬-২০২২