চৌগাছায় জমে উঠেছে কাঁঠালের হাট, দামে খুশি ক্রেতা-বিক্রেতা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ জমে উঠেছে যশোরের চৌগাছার কাঁঠালের হাট। কাকডাকা ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। নতুন জায়গায় হাট বসানোর কারণে কিছুটা ছন্দপতন ঘটলেও সময়ের সাথে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্য বছরের মত এবছরও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা আসছেন এবং পছন্দের কাঁঠাল নিয়ে ফিরছেন নিজ জেলাতে। কাঁঠালের বাজারদর ভাল হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই খুশি।
চৌগাছার প্রধান কাঁঠালের হাট ছিল ঐতিহ্যবাহী সরকারি শাহাদৎ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। নানা কারণে বাজার কর্তৃপক্ষ হাট সরিয়ে নিয়ে গেছে চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের পাশে পশুহাটের স্থানে। নতুন জায়গায় হাট বসানোর কারণে কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও অচিরেই তা সমাধান হবে বলে মনে করছেন সংশিষ্টরা।
সোমবার বেলা ১১ টার দিকে নতুন স্থানের কাঁঠাল হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই ব্যস্ত। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা কাঁঠাল কিনে ট্রাক বা পিকআপভ্যানে ভর্তি করছেন। গ্রাম থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ভ্যানে কাঁঠাল বোঝাই করে নিয়ে আসছেন হাটে। এসময় কথা হয় মৌসুমী ব্যবসায়ী চৌগাছা উপজেলার মুক্তদাহ গ্রামের মতিয়ার রহমান, একই গ্রামের শরিফুল ইসলাম, ইছাপুর গ্রামের আব্দুল করিম, ফাঁসতলা গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান, আড়কান্দি গ্রামের তপন কুমার, একই গ্রামের দুলাল কুমার ও আড়পাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের সাথে। তারা জানান, চৌগাছার বিভিন্ন গ্রাম হতে তারা কাঁঠাল কিনে তা বিক্রির জন্য চৌগাছা বাজারে নিয়ে আসেন। এ বছর গ্রাম হতে এক একটি কাঁঠাল ৪০ হতে ৫০ টাকা দরে কিনে তা বাজারে নিয়ে এসে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন। বাজারে কাঁঠালের চাহিদা ভাল থাকায় চলতি মৌসুমে ব্যবসা করে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। তবে নতুন জায়গায় হাট বসানোর কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
ভোলা জেলার পাইকার ব্যবসায়ী সাদেক আলী, সাতক্ষীরার মোস্তাফিজুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম, খুলনার শরিফুল ইসলাম বলেন, মৌসুম শুরু হলে তারা যশোরসহ বেশ কিছু জেলা ও উপজেলার হাট থেকে কাঁঠাল কিনে নিজ জেলাতে নিয়ে বিক্রি করেন। খুলনা, বাগেরহাট, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলাতে কাঁঠালের উৎপাদন খুবই কম। সে কারণে এসব জেলাতে কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা। তাই মৌসুম শুরু হলে নিয়মিত চৌগাছার হাট থেকে তারা ট্রাক ভর্তি করে কাঁঠাল নিয়ে যান। অন্য যে কোন হাটের তুলনায় চৌগাছার হাটে তারা ব্যবসা করে অধিক স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
সূত্র জানায়, কাঁঠালের উৎস দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম ঘাট এবং মালয়েশিয়ার রেইন ফরেস্টের মধ্যবর্তী অঞ্চলে হলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা-উপজেলাতে ব্যাপকভাবে কাঁঠাল পাওয়া যায়। এক সময় বাড়ির পাশে পতিত জমিতে বিনা যতœ আর অবহেলায় কাঁঠাল গাছ বেড়ে উঠতো। পরিপূর্ণ বয়সে গাছ ফল দেয়া শুরু করতো। গাছ মালিক নিজ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে দিতেন। এরপর অবশিষ্ট থাকলে সেটি বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে পরিকল্পিতভাবে কাঁঠালের চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গুণগত কিংবা ব্যবহারিক দিক দিয়ে কাঁঠাল বিদেশি ফলের চেয়ে উপকারী। খাদ্যগুণ, পুষ্টিমান ও ব্যবহারিক দিক থেকেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। কাঁচা বা পাকা যা-ই হোক না কেন, দ্ইু অবস্থায় খাদ্য হিসেবে সমান উপাদেয় এই কাঁঠাল। শুধু ফল নয়, তরকারি হিসেবেও কাঁঠালের রয়েছে আলাদা কদর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, কাঁঠাল বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকার মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয় ফল। চৌগাছার সব এলাকাতে কমবেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়। মূলত রসালো জাতের কাঁঠাল বেশি পাওয়া যায়। কৃষক যাতে বাড়ির পাশে পতিত জমি ফেলে না রেখে সেখানে কাঁঠালের চারা রোপণ করেন সে ব্যাপারে কৃষি অফিস চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।