রহস্য উদ্ঘাটন করলো পিবিআই : চৌগাছায় বলাৎকারে ব্যর্থ হয়ে চয়নকে হত্যা করা হয়, আটক ১

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের চৌগাছা উপজেলার দিঘলসিংহ গ্রামের নিহত ৯ম শ্রেণির ছাত্র মিরাজ হোসেন ওরফে চয়নের (১৭) লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বলাৎকারে ব্যর্থ হয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে সংস্থাটি। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রাজু হোসেন (২৩) নামে একজন মাইক্রোবাসচালককে আটক করেছে তারা। গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে চৌগাছার ঝিকরগাছা-ছুটিপুর সড়কের পৌরসভা গেটের বটতলার মোড় থেতে তাকে আটক করা হয়।
আটক রাজু হোসেন চৌগাছা উপজেলার বহিলাপোতা গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেন ম-লের ছেলে।
পিবিআই জানায়, দিঘলসিংহ গ্রামের সবুজ হোসেনের ছেলে চয়ন লেখাপড়ার পাশাপাশি আটক রাজু হোসেনের কাছে মাঝে মধ্যে মাইক্রোবাস চালানো শিখত। গত ১২ জুন রাত ৮টার দিকে সে বন্ধুদের সাথে পিকনিকের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় সে রাজু হোসেনের সাথেও মোবাইল ফোনে কথা বলে। কিন্তু চয়ন রাতে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। পরিবারের লোকজন কল দিয়ে তার মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পান। পরদিন সকাল ১০টার দিকে উপজেলার জলকার মাধবপুর ধোনারখালস্থ কপোতাক্ষ নদের উত্তর পাড় থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত চয়নের পিতা সবুজ হোসেন গত ১৪ জুন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে চৌগাছা থানায় মামলা করেন। এই মামলাটি স্ব-উদ্যোগে তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণ করে পিবিআই। সংস্থা থেকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় এসআই শরীফ এনামুল হককে। এরপর নানা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৪ জুন দুপুরে আটক করা হয় রাজু হোসেনকে। এ সময় তিনি চয়নকে হত্যার কথা স্বীকার এবং তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, মোবাইল ফোনের সিম ও মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।
আটক রাজু হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি পেশায় একজন মাইক্রোবাস চালক। চয়ন তার হেলপার হিসেবে কাজ করতো। গত ১২ জুন রাত ৮টার দিকে রাজু হোসেন মোবাইল ফোন করে চয়নকে ডেকে নিয়ে আসেন। রাতে প্রথমে চয়নের বাড়ির সামনে মাইক্রোবাসে করে তারা দুজনে মোবাইল ফোনে ভিডিও গান দেখেন। এরপর রাত গভীর হলে অর্থাৎ ২টার দিকে বলাৎকারের উদ্দেশ্যে চয়নকে জড়িয়ে ধরতে যান রাজু হোসেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে চয়ন গাড়ি থেকে নেমে যায়। তখন রাজু হোসেন এমন কাজ আর করবে না বলে চয়নকে বুঝিয়ে আবারও গাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখতে দেন। কিন্তু এরই মধ্যে রাজু হোসেন পুনরায় একই কাজ করার চেষ্টা করলে চয়ন ঘুম আসছে বলে গাড়ির পেছনের ছিটে গিয়ে শুয়ে পড়ে। পরবর্তীতে রাজু হোসেন গাড়ির পেছনের ছিটে গিয়ে ফের বলাৎকারের উদ্দেশ্যে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে চয়ন তাকে বাধা দেয়। এ সময় রাজু হোসেন গলায় গামছা পেঁচিয়ে চয়নকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে নিহত চয়নের লাশ বস্তাবন্দি করে এবং ভেতর ২টি ইট ঢুকিয়ে বস্তার মুখ বেঁধে ফেলেন রাজু হোসেন। এরপর বস্তাবন্দি লাশটি জলকার মাধবপুর ধোনারখালস্থ কপোতাক্ষ নদের উত্তর পাড়ে নিয়ে পানিতে ফেলে দেন তিনি।
পিবিআই আরও জানায়, আটক রাজু হোসেনকে বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সালমান আহমেদ শুভ তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।