ঝুলে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ১৫ হাজার কর্মী নিতে ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা। মালয়েশিয়ায় রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াও শেষ করেছেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশের সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে আছে সবকিছু। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সত্যায়ন না করায় এসব ভিসা ইস্যু হচ্ছে না। বাংলাদেশ হাইকমিশনের ‘অ্যাকটিভেশন সিস্টেম’ চালু না থাকায় হাইকমিশনে ভিসার জন্য কাগজপত্র জমা দিতে পারছেন না সে দেশের নিয়োগকর্তারা। এমন পরিস্থিতিতে হুমকিতে পড়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এত দিনের চেষ্টায় চালু হতে যাওয়া শ্রমবাজার ফের আটকে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। অথচ ২০১৭ সালের মতো একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদন পেলেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু করে আগামী দুই বছরে অন্তত ৫ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় উৎপাদন, বৃক্ষরোপণ, পরিষেবা, নির্মাণ ও কৃষিতে কর্মী নিয়োগে এখন পর্যন্ত সেক্টরগুলোর নিয়োগকারীদের কাছ থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩ লাখ ১৩ হাজার ১৪ জন বিদেশি কর্মীর আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে উৎপাদন খাতে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৪৬, পরিষেবা খাতে ৪৮ হাজার ১১৯, বৃক্ষরোপণ খাতে ৩৬ হাজার ৯৫০, নির্মাণ খাতে ২৭ হাজার ৩৩১, কৃষি খাতে ৭ হাজার ২৪৮ এবং খনি ও খনন খাতে ২০ জন। এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলে শ্রমিকদের সব খাতের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে। মালয়েশিয়ায় এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, নিয়োগকর্তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে মালয়েশিয়ার মন্ত্রণালয়। তবে কর্মী নিয়োগের প্রটোকলের পর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ অনুমোদনের পর এ আবেদন আরও চারটি স্থানে যাবে। প্রথমে লেভি প্রদানের জন্য যাবে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন দফতরে, সেখান থেকে কর্মীদের নিয়োগপত্র ও ডিমান্ড লেটার সত্যায়নের জন্য যাবে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনে। এরপর নিয়োগের অনুমোদন দেওয়ার জন্য পাঠানো হবে বিএমইটিতে। পরে রিক্রুটমেন্টের জন্য যাবে এজেন্সিগুলোর কাছে।
সূত্রের খবর, মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে তাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও বাংলাদেশের পক্ষের কোনো প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। কর্মীদের নিয়োগপত্র ও ডিমান্ড লেটার সত্যায়নের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য কারিগরি সুবিধা স্থাপন করতে মালয়েশিয়ার সিস্টেম প্রোভাইডারের দুই দফা চিঠির পরও কোনো জবাব দেয়নি বাংলাদেশ হাইকমিশন। কথা বলার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের অ্যাপয়ন্টমেন্ট চেয়েও পায়নি মালয়েশিয়ার সিস্টেম প্রোভাইডার। হাইকমিশনের এ অবস্থানকে নিজেদের প্রতি অবহেলা মনে করছেন মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা। এ অবহেলায় নিজেদের সময় নষ্ট না করে তাঁরা অন্য দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশ হারাতে পারে বড় ধরনের সুযোগ। জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে হাইকমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার অনেক কোম্পানি তাদের অনুকূলে সরকার অনুমোদিত চাহিদাপত্র সত্যায়নের জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিতে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিং হওয়ার আগে পর্যন্ত সত্যায়ন বন্ধ রাখতে হাইকমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে। এ কারণেই কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বসে আছে হাইকমিশন। ওই কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে আমরা বুঝতে পারছি ভুল হচ্ছে কিন্তু আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই। হাইকমিশন কর্মকর্তা আরও জানান, এবার মালয়েশিয়া সরকার পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই ডিজিটালাইজড করেছে। ফলে কর্মীদের চাহিদাপত্র থেকে শুরু করে নিয়োগের সব প্রক্রিয়া অনলাইনভিত্তিক হবে। এ কারণে বাংলাদেশ হাইকমিশনকেও মালয়েশিয়ার সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত করার কথা জানানো হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিস্টেম প্রোভাইডার বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ডাটা ডাউনলোডের প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কম্পিউটার, আইপ্যাড, সিগনেচার ডিভাইস স্থাপনের জন্য হাইকমিশনে আবেদন করেছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না পাওয়ায় এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছে না। জানা যায়, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে জিটুজি প্লাস পদ্ধতির আওতায় ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি এবং আরও ২০০ সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ শুরু হয়। ২০১৭-১৮ সালে এ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৩ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় যান। পরে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছু সময় বিরতি থাকার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর আগের সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন করা হয় এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা মালয়েশিয়া সরকার তুলে নেয়। সমঝোতার আওতায় গত ২৮ জানুয়ারি শ্রুমিক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে। এবার মালয়েশিয়া সরকার নির্বাচিত ২৫টি এজেন্সি এবং সহযোগী আরও ২৫০টি এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেওয়ার আগ্রহ জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ এগিয়ে নিতে পারছে না। ফলে মালয়েশিয়ায় বড়সংখ্যক কর্মী পাঠানোর সুযোগ হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।