ওমিক্রনের দাপটে শনাক্তের সংখ্যা কি গুরুত্ব হারাচ্ছে?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির কারণে আশঙ্কা বাড়ছে। কিন্তু কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সংখ্যায় নয় মনোযোগ দেওয়া উচিত হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে। আর তা শনাক্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না। রবিবার এবিসি টেলিভিশনে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যন্থনি ফাউচি যেমন বলেছেন, অনেক আক্রান্তের কম বা কোনও উপসর্গ নেই। মোট আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া যৌক্তিক হবে। তবে অপর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও শনাক্তের সংখ্যার গুরুত্ব রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনার তীব্র সংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট তাণ্ডব চালাচ্ছে। গত দুই সপ্তাহের তুলনায় এখন দৈনিক শনাক্ত তিনগুণ হয়েছে। সংক্রমিত কর্মীরা আইসোলেশনে যাওয়াতে স্কুল, হাসপাতাল ও এয়ারলাইন্সগুলো কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল গড়ে ১৪ হাজার ৮০০। আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি। কিন্তু এক বছর আগে সংক্রমণ চূড়ায় থাকার সময় এই সংখ্যা ছিল গড়ে ১৬ হাজার ৫০০। তখন অবশ্য বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক টিকা নেননি। গত দুই সপ্তাহ ধরে মৃতের সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে ১ হাজার ২০০ জনে। গত বছর জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪০০ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংখ্যাগুলোকে একত্রে বিশ্লেষণ করলে কোভিড টিকা কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যা রোগকে গুরুতর হতে দিচ্ছে না, এমনকি ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেও। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর মতো ওমিক্রনে আক্রান্তরা খুব গুরুতর অসুস্থ হচ্ছেন না। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি) জানায়, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সংক্রমিতের ৯৫ শতাংশ ছিল ওমিক্রন। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় কতটা বিদ্যুৎগতিতে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথ সেন্টার আইসিএপি’র পরিচালক ড. ওয়াফা এল-সদর বলছেন, শনাক্ত গণনা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা নয়। যুক্তরাষ্ট্রে মহামারির এই পর্যায়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত টিকাদান, রোগ ও মৃত্যু ঠেকানোতে। তাই এগুলো গণনাতে মনোযোগ দিতে হবে। দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বগামীতা ও নিম্নগামীতা মহামারিতে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করা হয় পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য। আগের ঢেউয়ের তুলনায় রোগের ভয়াবহতা ও মৃত্যুর ক্ষেত্রেও গ্রহণযোগ্য আগাম সতর্কতা হিসেবেও এটিকে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কিছু দিন ধরে এটিকে অপূর্ণ পরিমাপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। কারণ শনাক্তের সংখ্যা মূলত ল্যাবে পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া আক্রান্তের সংখ্যা। কোনও দেশে প্রকৃত সংক্রমিতের সংখ্যা নয়। যা নিশ্চিতভাবে ল্যাবে শনাক্তের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হতে পারে। দৈনিক শনাক্তের সংখ্যাও কিছু অনিয়ন্ত্রিত বিষয়ে ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার নতুন শনাক্তের সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনের কারণে শনাক্তের সংখ্যা লাফ দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সাত দিনের গড় শনাক্তের সংখ্যা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় দৈনিক শনাক্ত গণনার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বেশি। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অধ্যাপক অ্যান্ড্রিউ নয়মার বলছেন, শনাক্তের সংখ্যা কার্যকারিতা হারিয়েছে। তার কথায়, এখন হাসপাতালে ভর্তি আক্রান্তের সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ। এটি অনেক বেশি উদ্দেশ্যমূলক পরিমাপ। আমাকে যদি কোনও পরিমাপ বেছে নিতে হয় তাহলে হাসপাতালে ভতির তথ্যই নেব। হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যায় চিকিৎসকরা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহত সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। হাসপাতালগুলোর সামর্থ্যের তুলনায় সংকট মোকাবিলায় পরিস্থিতি কেমন হবে তা জানা যেতে পারে। যা স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের সংকট মোকাবিলার নীতি নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। তবে শনাক্তের সংখ্যা গণনা এখনই বাদ দেওয়ার পক্ষপাতী নন স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রান্সলেশনাল ইন্সটিটিউটের প্রধান ড. এরিক টপল। তিনি বলেন, শনাক্তের সংখ্যা পর্যালোচনা বাদ দেওয়া উচিত হবে না। কিন্তু আমরা প্রকৃত সংক্রমিতের একটি অংশই কেবল পাচ্ছি তা স্বীকার করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের হেলথ মেট্রিক্স সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক আলি মকদাদ মনে করেন, শনাক্তের সংখ্যা ভবিষ্যৎ হটস্পট ও সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছেছে কিনা সেটির ইঙ্গিত দিতে পারে। সংক্রমণ বাড়ছে নাকি কমছে তা জানার চেষ্টা না করা অন্ধের উড়ার মতো। এটি না করলে কীভাবে কোনও দেশ জানবে মহামারি পরিস্থিতি সম্পর্কে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যদি করোনা পরীক্ষাই কার্যকারিতা হারায় তাহলে সেটির জন্য দায়ী সরকার ধারাবাহিক ও গ্রহণযোগ্যভাবে সংক্রমণ তদারকির কোনও ব্যবস্থা গড়ে তুলেনি। নিয়ম পরিবর্তন করে ব্যর্থতা ঢাকা অগ্রহণযোগ্য। সূত্র: এপি