জীবননগরে প্রাচীণ ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ, চলাচলে দুর্ভোগ

0

নুর আলম, জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) ॥ চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহমান ভৈরব নদের ওপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত লোহার ব্রিজটি যুগের পর যুগ ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও আজ পর্যন্ত সেখানে লাগেনি উন্নয়নের কোন ছোঁয়া। ফলে জীবননগর পৌরবাসীসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজনকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ব্রিজটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।লোহার ব্রিজটি কবে এবং কীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে তা কেউ না জানলেও এলাকার প্রবীণদের দাবি ব্রিটিশ আমলে এটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে জীবননগরকে পাক হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের একটি অংশ ভেঙ্গে ফেলেন। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর জোড়াতালি দিয়ে ব্রিজটি চলাচলের উপযোগী করা হলেও বর্তমানে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজের ওপর দিয়ে পথচারীরা চলাচল করলেও পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভৈরব নদের কারণে জীবননগর শহরটি দু’টি ভাগে বিভক্ত। এ নদীর ওপর এক কিলোমিটারের ব্যবধানে দু’টি ব্রিজ থাকলেও ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ব্রিজটির কোন উন্নয়ন না হলেও দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে নির্মিত কাঠের ব্রিজটির উন্নয়ন করা হয়। পৌর শহরের পুরাতন লক্ষীপুরের আতিকুজ্জামান চঞ্চল বলেন, এলাকার মুরব্বীদের কাছে শুনেছি পাকিস্তান আমলে চুয়াডাঙ্গা মহাকুমার সাথে জীবননগর থানার সড়কপথের যোগাযোগ এই ব্রিজটির ওপর দিয়েই হতো। দেশের অনেক নদীর ওপর বড় বড় নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে এবং পুরাতন ব্রিজও সংস্কার করা হচ্ছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভেঙ্গে ফেলা এই ব্রিজটির আজ পর্যন্ত কোন সংস্কার হলো না। ব্রিজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ৫শ’ গজ রাস্তার স্থানে দুই কিলোমিটার ঘুরে শহরে প্রবেশ করতে হয়। অনেক সময় বাইরের উপজেলার না জানা লোকজন ৩০-৪০ মণ মাল ভর্তি আলমসাধু-পাওয়ার টিলার নিয়ে ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা যায়। ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজটি গত ১০-১২ বছর আগে পৌরসভার চেয়ারম্যান আশরাফুল হক পৌরসভার অর্থায়নে ব্রিজটি সংস্কার করে কোনভাবে চলাচলে উপযোগী করে তোলেন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত আর ব্রিজটির গায়ে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ওই ব্রিজের স্থলে একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ব্রিজটি নির্মিত হলে শহরে প্রবেশের একটি বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। সে ক্ষেত্রে প্রধান সড়কের ওপর যেমন চাপ কমবে, অন্যদিকে এলাকাবাসীর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। জীবননগর পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল হোসেন খোকন বলেন, ‘ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের পাশাপাশি পাশর্^বর্তী ওয়ার্ডের লোকজনও চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ব্রিজটি চলাচলের উপযোগী করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ জীবননগর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভৈরব নদীর ওপর লোহার ভাঙ্গা ব্রিজটি ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। ব্রিজটি বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যে কারণে এলাকাবাসীকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সেখানে একটি নতুন ব্রিজ নির্মানের জন্য চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্যের সাথে কয়েক দফায় কথা বলেছি। তিনি আমাকে ব্রিজ নির্মাণের ব্যাপারে আশ^স্তও করেছেন। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ব্রিজটি নির্মাণ করা না হলে পৌরসভার অর্থায়নে ব্রিজ নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হবে।’