সুবর্ণজয়ন্তীর বিজয় উৎসব তৃণমূলে ছড়াবে কি?

0

উদিসা ইসলাম॥ মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তীর বিজয় দিবস হবে স্মরণকালের সেরা বিজয়োৎসব। এ অনুষ্ঠানকে বর্ণাঢ্য ও মনোমুগ্ধকর করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলছে এ আয়োজন। যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি বুধবার (১৭ নভেম্বর) পুনর্গঠিত হয়েছে। এতে সদস্য সচিব করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষকে। শিল্পী ও সংস্কৃতি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এত বড় উৎসব কেবল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে না হয়ে তৃণমূলেও ছড়িয়ে দিতে হবে। জানা গেছে, বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠিত হয়েছে। উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয় ও শেখ হাসিনা সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ উপলক্ষে কয়েকটি উপকমিটিও করা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উদযাপন কমিটির সভায় আসন্ন বিজয় দিবসকে স্মরণকালের সেরা বিজয়োৎসব হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান মনে করেন সুবর্ণজয়ন্তীতে সার্বিক উদযাপনের জায়গায় না যেতে পারার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। তিনি বলেন, ‘নিজেদের সমালোচনার জায়গা থাকতে হবে। আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন একেবারেই অকার্যকর হয়ে গেছে। এ ধরনের দিন ও বছরকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে উদযাপন সেটি তো হবেই। কিন্তু নিজেদের আয়োজন তো থাকতে হবে, যেটি আগে ছিল। অনেক সংগ্রামের মধ্যেও নিজেদের অস্তিত্ব আমরা বিলীন হতে দিইনি। এখন সেসব তলানিতে।’
আবেদ খান বলেন, ‘কেবল বাংলাদেশ নয়, এটি সমগ্র বাঙালি জাতিসত্তার সমস্যা। আমাদের ভেতরকার যে জীবনীশক্তি তা নির্জীব হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী বিশাল ভাঙাগড়া চলছে। ফলে স্বাধীনতার ৫০ বছরের উদযাপন যে আমাদের নিজেদের ভেতর থেকে আসতে হবে সেই জায়গাতেই এখন আমরা নেই। পাড়ায় পাড়ায়, ক্লাবে প্রতিষ্ঠানে এই একটা বছরজুড়ে নানা আয়োজন থাকতে পারতো। এগুলো আমাদের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজন। এখনও সময় আছে, উদ্যোগ নিলেই হয়। বিজয় দিবস সারাদেশের প্রতিটা কোণে উদযাপন হলে সবাই জানবে দিনটি এভাবে উদযাপনেরই।’ সংগ্রাম করে, যুদ্ধ করে যে স্বাধীনতা অর্জন তা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য যে যেখানে যেমন করে পারে এর উদযাপনের আয়োজন দরকার উল্লেখ করে শিল্পী হাশেম খান বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছে। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা সবাইকে এক করে ফেলতে পেরেছিলেন। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যারা সেই হত্যা ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিল তারা চিহ্নিত বিরোধী হয়ে ওঠে। কিন্তু যদি সাধারণ মানুষের কথা বলি, তারা বঙ্গবন্ধুকে তখনও যেমন স্বীকার করেছে এখনও করে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে যে পরিবর্তন তা আমরা জানি। সাধারণ গ্রামের কৃষক তার কিছু কিছু জানে, কারণ তাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শুনেছে। সংগ্রাম করে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য যে যেখানে যেমন করে পারেন উদযাপন করতে হবে। উদযাপন মানে গান নাচ না, ইতিহাস চর্চা। শিশুদের কাছে গল্পের মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস জানানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ভূমিকা আছে। তাদের তৃণমূলে সংগঠন আছে। আমি মনে করি, আমাদের যারা সচেতন তাদের উচিত জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা। বয়স্ক লোক যারা মুক্তিসংগ্রামে গিয়েছিলন কিন্তু এখন সোচ্চার না, তাদের কাছ থেকে ইতিহাস জেনে তা সঠিক উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা বাকি আছে। আর এবারের বিজয় দিবসে সামগ্রিকভাবে এমনকিছু করা উচিত যাতে উৎসব আয়োজনটা সবাই তার নিজের বলে মনে করতে পারে।’ নাট্যজন ও সংগঠক রামেন্দু মজুমদার মনে করেন রাষ্ট্রীয় উদযাপন আলাদা বিষয়। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর যে সার্বিক উৎসব উদযাপন সেটি তো সবাইকে মিলে করতে হবে। তিনি বলেন, ‘কেবল সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও দেশে যে ফেডারেশনগুলো আছে তাদের প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। উদযাপনে অর্থ বড় ব্যাপার। সরকার সেই আর্থিক সহায়তা দেবে, আর কাজটা সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো করবে। সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব এভাবে না ভাবলে তৃণমূলে উৎসবের ঢেউ লাগবে না। সেটা জরুরি।’