গণপরিবহনের ভাড়া ও দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি জনজীবনকে আরো দুর্বিসহ করে তুলবে : জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত জনগণের উপর জ্বালানী তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ধারায় গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি দ্রব্যমূল্য আরেক দফা বৃদ্ধিসহ জনজীবনকে আরো দুর্বিসহ করবে আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট। ৮ নভেম্বর গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনের জেলা সভাপতি আব্দুল হক ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান এই দাবি জানিয়ে বলেন, নিত্যপণ্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতিতে এমনিতেই জনজীবন দিশেহারা। তার ওপর সরকার জ্বালানী তেল-গ্যাসের দাম অন্যায্যভাবে বৃদ্ধির ধারায় সড়ক ও নৌপথে গণপরিবহন ভাড়া প্রায় ২৭ থেকে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে এবং যাত্রীবাহী নৌযানে শনিবার বিকাল থেকে মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধির কৌশল নিয়ে ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে। জ্বালানী তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনেও খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা দ্রব্যমূল্যের উপর্যুপরি বৃদ্ধির ক্ষেত্র সৃষ্টি করছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে জনগণের প্রাত্যহিক জীবনে। গণপরিবহন ভাড়া ও জ্বালানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘাত-প্রতিঘাত একমুখী নয়, বহুমুখী। পরোক্ষভাবে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও সব পণ্যের পরিবহন ব্যয় বাড়বে। জ্বালানি তেলের ১৬ শতাংশ ব্যবহার হয় কৃষিতে। ফলে বাড়বে সেচের ব্যয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনেও পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। এখনো দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৩২ শতাংশ জ্বালানি তেলনির্ভর। ব্যয় বাড়বে সেখানেও। আবার কেরোসিন ও এলপিজির মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রাম-শহরে রান্নায় জ্বালানি খরচ বাড়বে। একই সঙ্গে অটোগ্যাসে মূল্যবৃদ্ধিও ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি ছোট গণপরিবহনের জ্বালানি খরচ বাড়িয়ে দেবে। অপরদিকে শুধু তেলচালিত গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির করলেও কোনটি তেল আর কোনটি সিএনজিচালিত তা মনিটরিংয়ের অভাবে প্রকৃতপক্ষে সকল গণপরিবহনের ভাড়াই বৃদ্ধি পাবে। বলা চলে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাত সব শ্রেণী-পেশার মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর আরো পীড়নমূলক হবে। বলা হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় ও বিপিসির লোকসান কমানোর জন্যই বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয় ২০১৩ সালে। এরপর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ছিল নিম্নমুখী। এ প্রেক্ষাপটে মাঝে ২০১৬ সালে দাম কিছুটা কমিয়েছিল জ্বালানি বিভাগ। কিন্তু যতটা দরকার ছিল ততটা কমানো হয়নি। কমানো হয়েছিল মাত্র ৩ টাকা। এর পেছনে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, দীর্ঘদিন থেকে বিপিসি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। সেটিকে মুনাফার ধারায় ফেরাতে দাম বেশি কমানো হয়নি। স্বভাবত গত সাত বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। দাম বাড়ানোর পরিবর্তে বরং বিপিসির মুনাফা মানুষের দুঃসময়ে ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার উচিৎ। এতে অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় আরেকটু স্বস্তি ফিরবে। একই সঙ্গে ভারত ও অন্য দেশের মতো শুল্কও কমানো যেতে পারে। বর্তমানে দেশে জ্বালানি পণ্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ শুল্ক ও কর বিদ্যমান। এটা কিছুটা কমানো হলে তা ভোক্তাসাধারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হবে। সরকার উচ্চ প্রবৃদ্ধির সাফল্য প্রচার করছে। কিন্তু সম্প্রতি পিপিআরসি-বিআইজিডি তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে, করোনাকালে দেশে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। দারিদ্র্যের হার এখন প্রায় ৪২ শতাংশের মতো, যা ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন দরিদ্র শ্রেণি তৈরি হওয়ার বিষয়টি স্বীকারই করা হচ্ছে না। এটা অস্বীকৃতির একটি অপসংস্কৃতি। এবারের বাজেটেও বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে। আার জ্বালানির দাম ও গণপরিবহন ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এই অস্বীকৃতির সংস্কৃতি কাজ করেছে যা সরকারের গণবিরোধী স্বৈরাচারী চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। প্রবাদে আছে, অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ হয় না। তাই সরকারের এ সকল গণবিরোধী ধারাবাহিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।