একের পর এক হত্যাকাণ্ডে রোহিঙ্গা শিবিরে আতঙ্ক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে এখনো রক্তের দাগ আছে। বাংলাদেশের আশ্রয় নেয়া ৮ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার নেতা ছিলেন তিনি। তাকে হত্যা করার পর এই রোহিঙ্গারা এখন ভয়ের মধ্যে বাস করছে বলে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। মুহিবুল্লাহ হত্যার তিন সপ্তাহ পরেও হত্যার হুমকি পাচ্ছেন তার গ্রুপের সদস্যরা। নুর ছদ্মনামে এমনই একজন এএফপিকে জানিয়েছেন, তাকে ফোন করে বলা হয়েছে সে এখন পরবর্তী টার্গেট। এভাবে মুহিবুল্লাহর গ্রুপের অনেককেই হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। নুর বলেন, যেভাবে আমাদের নেতাসহ অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আমাকেও সেভাবে গুলি করে মারতে পারে তারা। এএফপির কাছে নিজের আসল নামও প্রকাশ করেননি তিনি। এই হামলাকারীরা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা সদস্য বলেই বিশ্বাস তার। যদিও আরসা মুহিবুল্লাহকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা এসব হত্যাকাণ্ডের পর তীব্র আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। দিনের বেলা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা দিলেও রাতের বেলা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করে রোহিঙ্গা গ্যাংগুলো। ইসরাফিল নামের এক রোহিঙ্গা এএফপিকে বলেন, সূর্য ডোবার পর ক্যাম্পের চিত্র পুরোপুরি বদলে যায়। অন্ধকারের মধ্যে এই গ্যাংগুলো যা খুশি তাই করতে পারে।
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে বসেই মুহিবুল্লাহ ও তার সহকর্মীরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপরে হওয়া অত্যাচার নথিবধ্য করছিলেন। ২০১৯ সালে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা জড়ো করে আলোচনায় এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। সে বছরই তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন এবং জেনেভায় জাতিসংঘের বৈঠকে বক্তব্য দেন। কিন্তু তাকে ভালভাবে নেয়নি আরসা। সংগঠনটির মনে হতে থাকে, তাদের ছাপিয়ে মুহিবুল্লাহ দ্রুত রোহিঙ্গা জাতির মুখপাত্র হয়ে উঠছেন। মুহিবুল্লাহর হত্যার তিন সপ্তাহ পরেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আরসাকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই তাদেরকে হত্যা করা হয় বলে জানা যায়। বিদেশে থাকা এক রোহিঙ্গা এক্টিভিস্ট বলেন, আগে থেকেই আরসা এমন নৃশংস হামলা চালিয়ে আসছে। তাদেরকে সমর্থন না দেয়ায় এর আগে দুই ইসলামি ধর্মগুরুকেও হত্যা করে তারা। ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আরসা এসব হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ ৭ জনকে হত্যার পর বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা গ্যাংগুলোর মধ্যে সংঘাতে একাধিক হত্যার ঘটনা ঘটলে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করেছিল। পাশাপাশি এলিট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে এলাকায় টহল দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সেসময় পুলিশ একাধিক নিরাপত্তা অভিযান চালায়, যাতে কয়েক ডজন রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারী নিহত হন। এদিকে, মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কয়েক ডজন মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পে আরসা সক্রিয় আছে তা তারা স্বীকার করছেন না। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য গ্যাংগুলোর দ্বন্দ্বকেই দায়ি করা হচ্ছে। এএফপিকে কুতুপালং ক্যাম্পের কমান্ডিং অফিসার নাইমুল হক এএফপিকে জোর দিয়ে বলেন, ক্যাম্পগুলোতে আরসার কোনো উপস্থিতি নেই। কিন্তু এখনো মুহিবুল্লাহর সহকর্মীদের আশ্বস্ত করার মতো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। রোহিঙ্গা নেতা কিয়াও মিন অভিযোগ করেন, পুলিশ আরসাকে রাতের বেলা ‘রাজত্ব’ করতে সহায়তা করে। এএফপিকে শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতাদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী মুহিবুল্লাহসহ অন্তত ছয়টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। তাদেরকে টার্গেট করে হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এক্টিভিস্ট সা ফিও থিদা বলেন, আমরা ভেবেছিলাম বাংলাদেশে আমরা নিরাপদ থাকব। কিন্তু এখন আমরা জানি না কখন খুনিরা আমাদের দরজায় কড়া নাড়বে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে গণহত্যার দিনগুলিতে সামরিক বাহিনীর ভয়ের মধ্যে আমরা বাস করতাম। এখানেও আমরা সেরকম চরম আতঙ্কে বাস করছি।

–এফপির প্রতিবেদন