ধর্মঘটে বিআরটিসি বাসই একমাত্র ভরসা

0

বিশেষ সংবাদদাতা॥ রাজধানীর শাহজাহানপুরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আনসার আলী। শুক্রবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে মোহাম্মদপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। তবে রাস্তায় কোনো বাস না পেয়ে পায়ে হেঁটে শাহবাগে আসেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বৃদ্ধ আনসার আলী। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর আসে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাস। তবে যাত্রীদের ভিড়ে সে বাসে উঠতে ব্যর্থ হন তিনি। দুপুরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আনসার আলীর। অভিযোগ করে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণপরিবহন বন্ধ করে ভাড়া বাড়ানোর পায়তারা চলছে। দেখা যাবে শেষ পর্যন্ত বাসের ভাড়া দ্বিগুণ হবে। যাত্রীদেরকেই বেশি ভাড়া গুনতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে (শুক্রবার) ভোর থেকে গণপরিবহন বিশেষ করে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠছে। বাসের বিকল্প যে সকল যানবাহন (সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা, লেগুনা) রাস্তায় চলছে সেগুলোর দ্বিগুণের বেশি নেওয়া হচ্ছে। জীবন ও জীবিকাসহ নানা প্রয়োজনে যারা ঘরের বাইরে বের হয়েছেন, নিরুপায় হয়ে তাদের অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে ছুটতে হচ্ছে।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিন রাজধানীর শাহবাগ ঘুরে দেখা গেছে, ১২টার পর থেকে মিরপুর ও বিমানবন্দর রুটে সরকারি দ্বিতল বিআরটিসি বাস চলাচল শুরু হয়। চাহিদার তুলনায় বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় শাহবাগ মোড়ে বাস আসামাত্র বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা উঠার চেষ্টা করতে থাকেন। যাত্রী নামার আগেই অনেকে বাসে উঠতে চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে পুরুষরা বাসে উঠতে সক্ষম হলেও নারী ও বয়স্করা ভিড়ের কারণে উঠতে ব্যর্থ হন। রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা প্রিয়ন্তী সাহা মিরপুরের বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি জানান, দুপুর ২টা থেকে সরকারি-বেসরকারি আটটি ব্যাংকের পরীক্ষা শুরু হবে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সেখানে পৌঁছাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শাহবাগ থেকে ভাড়া ৫০০ টাকা দাবি করায় যাননি। তিনি বলেন, কষ্ট হলেও ভিড় ঠেলে বিআরটিসি বাসে করেই যাওয়ার চেষ্টা করবেন। দুপুর ২টার পর দ্বিতল বাসের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অপেক্ষামান মানুষের সংখ্যার তুলনায় যা ছিল অপ্রতুল। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি। ভাড়া বাড়ানো না হলে তারা রাস্তায় পরিবহন নামাবেন না। বুধবার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে সরকার। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে ভাড়া বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে এ বিষয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল থেকে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। তবে তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম না কমানো পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলেও জানান বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম। এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রাস্তায় বেরিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, শুক্রবার থেকে গাড়ি বন্ধ থাকার বিষয়ে তারা অবগত নয়। জরুরি প্রয়োজেন রাস্তায় বেরিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, সারাদেশের মালিকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সারাদেশের বাস মালিকদের সেন্টিমেন্টের সঙ্গে আমরা কেন্দ্রীয় মালিক সমিতি একমত।