নাসিরনগরে হামলা: তদন্তেই পাঁচ বছর পার

0

উজ্জল চক্রবর্তী॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলার পাঁচ বছরেও শুরু হয়নি বিচার। যার ফলে এখনও আতঙ্কে আছেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে ওই ঘটনার বিচারের পক্ষে সরব হয়েছেন সচেতন মহলও। পুলিশ বলছে, হামলার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলার বিচারকাজ দ্রুত শুরু হবে। নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবের গ্রামে রসরাজ দাস নামের একটি জেলে পরিবারের নিরক্ষর এক যুবকের ফেসবুক আইডি থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতমূলক পোস্ট করা হয়েছে এমন অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর সদরের হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে সদরের কলেজ মোড়ে পৃথক দুটি সমাবেশ থেকে একদল লোক লাঠিসোটা হাতে মিছিল বের করে। পরে তারা হিন্দুদের বিভিন্ন পাড়ায় ঢুকে অন্তত ১০টি মন্দির ও শতাধিক বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী ও পুলিশের পক্ষ থেকে নাসিরনগর থানায় ৮টি মামলা করা হয়। কিন্ত গৌর মন্দিরে হামলা মামলার চার্জশিট ছাড়া বাকিগুলোর তদন্তই শেষ হয়নি। ওই দিনের হামলায় মারধরের শিকার হয়েছিলেন মন্দিরের পুরোহিতওই দিনের হামলায় মারধরের শিকার হয়েছিলেন মন্দিরের পুরোহিত
পাঁচ বছর আগের ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্টু দাস বলেন, ‘আমার চোখে-মুখে এখনও দুঃস্বপ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ভয় নিয়েই আছি। নাসিরনগরে পাঁচ বছর আগে যে হামলা হয়েছে, সেটার যদি বিচার হতো তবে রংপুর, কুমিল্লার ঘটনাগুলো ঘটতো না।’ আরেক ভুক্তভোগী জয়কালী দাস বলেন, ‘বিচার না হওয়ার কারণেই বারবার মন্দিরে হামলা হয়। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ নাসিরনগর শিব মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অরুন দাস বলেন, ‘নাসিরনগরে যা ঘটেছিল তার দাগ এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি। ভেবেছিলাম এ হামলার বিচার পাবো। কিন্তু পাইনি। পাবো কিনা জানি না। তবে একটা ঘটনার রেশ ধরেই আরেকটি ঘটে।’ নাসিরনগর গৌর মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক কাজল জ্যোতি দত্ত বলেন, ‘আমাদের মন্দিরের পুরোহিতকে মারধর করা হয়েছিল। মন্দিরে ভাংচুর করা হয়েছিল। আমাদের ছেলেমেয়েরা এখনও সেই আতঙ্কে আছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর বলেন, ‘নাসিরনগরের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার যদি যথাযথ বিচার হতো, তবে কোথাও আর হামলা হতো না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’ শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) আখাউড়ায় উপজেলা পরিষদে ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া অ্যাম্বুলেন্স প্রদান অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘কিছু কুচক্রি মহল আছে যারা স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য গণ্ডগোল লাগিয়ে ছিল। এসব তদন্তে বেরিয়ে আসছে। সম্প্রতি দুর্গাপূজায় যে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে সেটাও পরিকল্পিত। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে এটা পুরো বাংলাদেশের চিত্র নয়। এসব হামলা রোধে সরকার বদ্ধ পরিকর।’ ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবরের হামলায় অন্তত ১০টি মন্দির ভাংচুর করা হয়২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবরের হামলায় অন্তত ১০টি মন্দির ভাংচুর করা হয় এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ৩ আসনের সংসদ র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘বিচার হচ্ছে না বলেই সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। একের পর হামলা হচ্ছে। কিন্তু কেন বিচার হবে না? মাত্র একটি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর দেওয়া হচ্ছে না কেন?’ ২০১৬ সালে হামলার ঘটনায় করা আটটি মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘প্রধান মামলাটি ছিল গৌরমন্দিরে হামলার। তাতে ২২৮ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছি। ওটার বিচার প্রক্রিয়াধীন। ৩০ নভেম্বর বাকি মন্দিরগুলোতে হামলা মামলার চার্জ গঠন শুরু হবে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে। অচিরেই পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করবো।’ উল্লেখ্য, নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ১২৫ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছিল পুলিশ। তবে পর্যায়ক্রমে সকলেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।