শীতের আগমনে চৌগাছার গাছিরা ব্যস্ত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)॥ প্রভাতের শিশির ভোজ ঘাস, ঘন কুয়াশার চাঁদর আর খেজুর গাছ থেকে গাছিদের রস সংগ্রহের ব্যস্ততা শীতের আগমনের বার্তা দিচ্ছে। মৃদু শীতে চৌগাছায় খেজুর গাছ তোলা, চাচ দেয়ার কাজে ব্যস্ত সব গাছিরা। প্রতি বছর শীত এলে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা পায়েস তৈরীর ধুম পড়ে যায়, বাড়িতে বাড়িতে বয়ে যায় অন্য রকম এক আনন্দ। শীতের আগমনে যশোরের চৌগাছার গাছিরা খেজুর গাছ তোলা, চাচ দেয়ার কাজ শুরু করেছেন। শীত মৌসুম এলেই গাছিরা যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েন, এবছরও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। তবে খেজুর গাছের সংখ্যা কমায় কমে গেছে গাছির সংখ্যা। যশোরের যশ খেজুরের রস এই বাণী ধরে রাখতে খেজুর গাছ সংরক্ষনের কোন বিকল্প নেই মনে করছেন সচেতন মহল।
শীতের শুরতে খেজুরের রস,গুড় আর পাটালির জন্য দেশের মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকে এর স্বাদ গন্ধ নিতে। আর শহরে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের সমাগম ঘটে গ্রামের বাড়ির স্বজনদের কাছে। শীতের পিঠা পায়েস খাওয়াই প্রধান উদ্দেশ্য। শীতের এই মৌসুমে আত্মীয়তার বন্ধনও যেন বেশ মজবুত হয় এমনটি জানালেন এ জনপদে বসবাসকারীরা। সরেজমিন উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের বাঘারদাড়ি, পৌর এলঅকার বেলেমাঠ, কংশারীপুর গ্রাম এলাকায় যেয়ে দেখা যায় গাছিরা বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কথা হয় বাঘারদাড়ি গ্রামর শহিদুল ইসলামের ছেলে গাছি লিয়াকত ও শওকত আলীর সাথে। আপন দুই ভাই শীত এলেই শতশত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে মেতে উঠেন। গাছি লিয়াকত আলী জানান, প্রতি বছর ১০০ থেকে দেড়শ খেজুর গাছ থেকে তিনি রস সংগ্রহ করেন। এ বছর সংখ্যা হয়ত কিছু বৃদ্ধি পেতে পারে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গাছ তোলা ও চাচ দেয়া হয়েছে, দু’একদিন পরেই নলেনের কাজ শুরু হবে। সব ঠিক থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন নলেন গুড় বের হবে। শীত যত বাড়বে গাছে গাছে তত রসও বাড়বে। শীতের দিনের সবচেয়ে আকর্ষন দিনের শুরুতে খেজুরের রস, সন্ধ্যায় সন্ধ্যা রস ও সুস্বাদু গুড় পাটালি। আর রসের তৈরী পিঠা পায়েসের তো জুড়িই নেই। তিনি বলেন, শীতের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ৮/১০ কেজি গুড় তৈরী করেন। তবে দিন শেষে কোন গুড় তার বাড়িতে থাকে না। নিজ উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা এমনকি যশোর শহর থেকেও অনেকে তার নিকট গুড় কিনতে আসেন।
গাছি লিয়াকত হোসেনের মত তার আপন ছোট ভাই শওকত আলী শতাধিক খেজুর গাছ তুলেছেন। তার মত ওই গ্রামের গাছি সলেমান হোসেন, রবিউল ইসলাম, বেলেমাঠ গ্রামের বিল্লাল হোসেনসহ অনেক গাছি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত। এলাকাবাসি জানান, এমন এক সময় ছিল মাঠের যে দিকে চোখ যেত শুধুই খেজুর গাছ দেখা যেত। কিন্তু এখন খেজুর গাছ অনেক কমে গেছে। কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গাছ মালিকদের ফুসলিয়ে খেজুর গাছ মেরে তা ইটভাটা গুলোতে বিক্রি করেছেন। যে সব ব্যাক্তি খেজুর গাছ ভাটায় বিক্রি করেছেন সেটি যে ঠিক করেননি তা এখন অনেকেই বুঝতে পারছেন। গত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষ খেজুর গাছের গুরুত্ব বুঝতে পেরে পতিত জমি কিংবা ভাল জমির আইলে খেজুরের চারা রোপন করছেন। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে খেজুর গাছ রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ না নিলে অন্য সব বিলুপ্ত হওয়া গাছ গাছালির মত খেজুর গাছের নামও বিলুপ্তির খাতায় লিখতে হবে মনে করছেন এ জনপদের গাছিসহ সচেতন মহল।