ব্যাটিং দীনতায় বড় হার বাংলাদেশের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রতিপক্ষ শক্তিশালী। এমন দলের বিরুদ্ধে বড় স্কোরের বিকল্প ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ শুরু থেকেই বিপর্যস্ত। ওপেনিং জুটির ব্যর্থতার পর পারেননি সাকিবও। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা করলেও রান আসেনি প্রত্যাশামতো। তাও শেষের দিকে স্পিনার নাসুম ঝলকে ১২৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু এমন মামুলি লক্ষ্য ইংল্যান্ডের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়নি। অনুমিতভাবে বড় ব্যবধানেই হেরেছে বাংলাদেশ। বুধবার আবুধাবিতে সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশের হার ৮ উইকেটের ব্যবধানে। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ করে ৯ উইকেটে ১২৪ রান। জবাবে ইংল্যান্ড জয়ের বন্দরে নোঙর করে ৩৫ বল হাতে রেখে। উইকেট পতন মাত্র দুটি। টানা দুই জয়ে সেমির সম্ভাবনা জোড়ালো করল ইংল্যান্ড। টানা দুই হারে বিদায়ের সুর বাংলাদেশ শিবিরে। সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডকে চেপে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরুটা দারুণ করেন দুই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ও জস বাটলার। রান আসতে থাকে তরতরিয়ে। তারপরও ওপেনিং জুটি ভাঙতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ ৪.৫ ওভারে। নাসুমের বলে নাঈমের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ১৮ বলে ১৮ রান করা জশ বাটলার।
এরপর জেসন রয়ের সাথে ডেভিড মালানের জুটি ইংল্যান্ডকে নিয়ে যায় জয়ের কাছাকাছি। কী স্পিন, কী পেস, কোনোভাবেই ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের রুখতে পারেনি টাইগার বোলাররা। শেষের দিকে ইনিংস সর্বোচ্চ রান করে আউট হন জেসন রয়। ৩৮ বলে ৬১ রান করা রয়কে নাসুমের ক্যাচ বানান শরিফুল ইসলাম। তার ইনিংসে ছিল পাচটি চার ও তিনটি ছক্কার মার। ২৫ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন ডেভিড মালান। বেয়ারস্টো নট আউট ৪ বলে ৮ রানে। ৩ ওভারে ২৪ রানে উইকেটশূন্য সাকিব। মোস্তাফিজুরও উইকেটশূন্য। ৩ ওভারে তিনি দেন ২৩। নাসুম ৩ ওভারে ২৬ রানে এক উইকেট। ৩.১ ওভারে ২৬ রানে শরিফুলও পান একটি উইকেট। মেহেদী হাসান ২ ওভারে দেন ২১ রান। এর আগে ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরু থেকেই ইংলিশদের বোলিং তোপে ধুঁকতে থাকে মাহমুদউল্লাহ শিবির। একাদশে টিকে গেলেও উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটন। অথচ শুরুটা ছিল দারুণ। ম্যাচের প্রথম ওভারে মইন আলিকে টানা দুটি চার মারেন ডাউন দ্য উইকেটে খেলে। শরীরী ভাষা তার মনে হচ্ছিল দারুণ ইতিবাচক। কিন্তু ব্যাটিংয়ে সেটির প্রতিফলন ফেলতে পারলেন না। তৃতীয় ওভারে মঈনকে একটু শাফল করে সুইপ খেলার চেষ্টা করেন। বল তার ব্যাটের ওপরের দিকে লিগে সহজ ক্যাচ স্কয়ার লেগে মুঠোয় জমান লিয়াম লিভিংস্টোন। লিটনের দুঃসময় দীর্ঘায়িত হলো আরো। ৯ বলে ৮ রানে আউট হন তিনি। লিটনের আউটের পরের বলেই আউট আগের ম্যাচে ফিফটি করা মোহাম্মদ নাঈম। মঈনের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে চেয়েছিলেন তিনি। টাইমিং হয়নি। মিড অনে সহজ ক্যাচ নেন ক্রিস ওকস। নাঈম আউট ৭ বলে ৫ রানে। দলীয় ১৪ রানে দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আশা ছিল সাকিব-মুশফিক জুটিতে। তবে এবার সাকিব হাটলেন উল্টো পথে। পারলেন না থিতু হতে। ব্যক্তিগত ৪ রানে তিনি ওকসের শিকার। বল খেলেছেন সাতটি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে লেগ স্টাম্পে থাকা লেংথ বল একটু দেরিতে পুলের মতো খেলে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে পাঠাতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু দুর্দান্ত ক্যাচ নেন রশিদ। পাওয়ার প্লেতে বাউন্ডারি তিনটি, উইকেটও তিনটি। সব মিলিয়ে হতাশার পাওয়ার প্লে বাংলাদেশের জন্য। ৬ ওভারের রান ৩ উইকেটে ২৭। তারপরও মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর জুটি শুরুর হতাশা কিছুটা দূর করেন। ব্যক্তিগত ৯ রানে আউট হয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। চোখধাঁধানো আরেকটি ক্যাচ প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। তবে অল্পের পর জন্য রক্ষা পান তিনি। জীবন পেয়ে মুশফিক ভালোই আগাচ্ছিলেন। মন্থর উইকেটে জুটি ভাঙতে অনিয়মিত স্পিনার লিয়াম লিভিংস্টোনকে আক্রমণে আনেন ওয়েন মর্গান। সাফল্য মেলে প্রথম ওভারেই। লেগস্পিনার লিভিংস্টোনকে রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টায় আউট হন মুশফিকুর রহিম। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল ইংল্যান্ড। বল লাগছিল মিড স্টাম্পে। ৩০ বলে ২৯ রান মুশফিকের। ভাঙে ৩২ বলে ৩৭ রানের জুটি। টিকতে পারেননি আফিফও। আগের ম্যাচের মতোই এবারও তিনি রান আউট। ৬ বলে এক চারে ৫ রান সম্বল তার। ১২.৪ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ৭৩। রান বাড়ানোর চেষ্টায় তখন বাকি ব্যাটসম্যানরা। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ থিতু হতে হতেই নেন বিদায়। টেস্ট মেজাজে খেলেন ২৪ বলে ১৯ রান, বাউন্ডার একটি। লিভিংস্টোনের বলে ক্যাচ দেন ওকসের হাতে। বাংলাদেশের দলীয় রান তখন ৮৩।
অধিনায়কের বিদায়ের পর ক্রিজে ছিলেন নুরুল হাসান ও মেহেদী হাসান। দুজনের হাতেই মার ছিল। কিন্তু শেষের দিকে যেভাবে রান দরকার ছিল। আসেনি তা। মিলসের বলে ওকসের হাতে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান। ১০ বলে দুই চারে তিনি করেন ১১ রান। ১৮ ওভারে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ১০২। ১৯তম ওভার শেষে রান গিয়ে দাঁড়ায় ১১৯। আর সেটা স্পিনার নাসুমের ব্যাটিং ঝলকের কারণে। ১৯তম ওভারে আদিল রশিদকে দুই ছক্কা ও একটি চার হাঁকান তিনি। এই ওভারে আসে সব মিলিয়ে ১৭ রান। শেষ ওভারে নাসুম স্ট্রাইক পান একটি বলে। ওয়াইডসহ আসে দুটি রান। নুরুল হাসান কাজে লাগাতে পারেননি কয়েকটি বল। মিলসের পঞ্চম বলে তিনি হন আউট, ১৮ বলে ১৬ রান করেন তিনি। শেষ বল খেলতে এসে বোল্ড হন মোস্তাফিজুর রহমান। বল হাতে ইংল্যান্ডের হয়ে তিন উইকেট নেন টাইমাল মিলস। মঈন আলী ও লিভিংস্টোন দুটি, ক্রিস ওকস একটি উইকেট লাভ করেন।