আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক: চৌগাছার আলোচিত আ.লীগ নেতা জসিম ও তার স্ত্রী দুই কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাস মালিক সমিতির সভাপতি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন শুধু সোনার বার ডাকাতি গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত নন, তার অবৈধ অর্ধকোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার স্ত্রী ফারহানা ইসলামেরও অবৈধ দেড় কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তদন্তে এই দম্পতির বিপুল অঙ্কের অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়ায় ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।
দুদক সূত্রে জানা যায়, চৌগাছা উপজেলার জামালতা গ্রামের মো. মহিউদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন। তারা ১ ভাই এবং ৩ বোন। তিনি পিতামাতার বড় সন্তান। তার পিতা একজন কৃষক। পরিবারের অভাবের কারণে এসএসসি পাশের পর তাকে সংসার পরিচালনার জন্য কাজের সন্ধানে নামতে হয়। ২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। ২০০৫ সালে তিনি বিয়ে করেন। এরপর ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর পদোন্নতি পেয়ে তিনি পুলিশের এএসআই হন। কিন্তু পদোন্নতি লাভের পর থেকেই তিনি বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। যে কারণে ২০১৮ সালের ১৮ মে তাকে পুলিশ বিভাগ থেকে চাকরিচ্যুৎ করা হয়।
সূত্র জানায়, চাকরিচ্যুৎ পুলিশ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়ায় তার এবং স্ত্রী ফারহানা ইসলামের নামে থাকা সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য দুদক থেকে তাদের প্রতি নোটিশ ইস্যু করা হয়। ২০১৯ সালের ১০ জুলাই নোটিশ গ্রহণ করলে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে তারা তাদের সম্পদের হিসাব দাখিল করেননি। পরবর্তীতে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়। দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন তদন্ত শুরু করেন। জসিম উদ্দিন ৩টি বাসের মালিক (যশোর-ব-১১-০১৮৯, যশোর-ব-১১-০১৯০, যশোর-১১-০২০৫) বলে দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে। যদিও তিনি গাড়িগুলো কেনার সময় ডাউন পেমেন্ট দিয়েছিলেন ৭ লাখ টাকা। তার একটি দামি প্রাইভেটকারের (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৪-৪৫০৩) সন্ধান পাওয়া যায়, যার মূল্য ১০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া তার ৪ লাখ ৫২ হাজার ৬শ’ টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেলও রয়েছে। তদন্তে তার প্রায় ৫৯ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ৫৫ লাখ ৬ হাজার ৬শ’ টাকার সম্পদ তিনি অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় আইন শৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে ১টি মামলা (নং-১৭, তারিখ ১৮/১০/২০১৭) রয়েছে। এছাড়া ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১টি মামলা (নং-৬ তারিখ ৫/৭/২০১৭) এবং যশোরের চৌগাছা থানায় ১টি মামলা (নং-৩১ তারিখ ২৯/৫/২০২০) রয়েছে বলে দুদক খোঁজ নিয়ে জানতে পারে। দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, তদন্তে জসিম উদ্দিনের চাকরিকালীন আয়ের অর্থ ছাড়া আর কোন বৈধভাবে সম্পদ উপার্জনের প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। দুদক সূত্র জানায়, জসিম উদ্দিনের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম মায়ের কাছ থেকে হেবা দলিল মুলে সাড়ে ৬ শতক জমির মালিক হয়েছেন। ওই জমির ওপর ৬ তলার ভিত দিয়ে সুপার কোয়ালিটি সম্পন্ন ৫ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে এই ভবন নির্মাণ করা হয়। তদন্তে প্রকাশ পায় যে, ফারহানা ইসলাম প্রায় দেড় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক। সূত্রটি আরো জানায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জসিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফারহানা ইসলামকে অভিযুক্ত করে চলতি বছরের ২১ মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন। একই সাথে চার্জশিটে এই দম্পতির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়। উল্লেখ্য, সম্প্রতি যশোরের বাঘারপাড়ায় একটি ডাকাত চক্র ( সোনার বার ডাকাত গ্রুপ) পুলিশের হাতে আটক হয়। এর মধ্যে মিজানুর রহমান ও জাহাঙ্গীর হোসেন নামে দুজন অপরাধীর আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চক্রের সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের নাম প্রকাশ পায়। এর প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশ তাকে ধরতে চৌগাছার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিলো। কিন্তু তাকে আটক করতে পারেনি।