গণতন্ত্র সূচকে এগোলেও তা আশাব্যঞ্জক নয়: ড. ইফতেখারুজ্জামান

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, অতি সম্প্রতি প্রকাশিত বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকে চার ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের ৭৬তম অবস্থান সাময়িক স্বস্তিদায়ক হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে আমরা এখনো ‘হাইব্রিড রিজিমে’ অবস্থান করছি, যাকে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা যাবে না। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেনি বলেই শুধু বাংলাদেশের এই স্কোর নয়; বরং আমাদের শক্তিশালী বেশ কিছু আইনি কাঠামো থাকলেও সেগুলো পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া এবং ‘আপাত ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তন’ হয় বলে প্রচার থাকলেও বাস্তবে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কাঠামোগত ও আদর্শিক দূর্বলতায় সূচকে আমাদের এই অবস্থান। ‘দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক একদিনের গণতন্ত্রও বিলীন হতে চলেছে’ বলে সংসদে সম্প্রতি যে আলোচনা হয়েছে সেটিও দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার দুর্বলতাকে যথার্থভাবেই ফুটিয়ে তোলে, যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে ড. জামান বলেন, একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী তা নির্ভর করে দেশটির নির্বাচন ব্যবস্থা এবং সংসদীয় কার্যাবলীর মধ্যদিয়ে। কিন্তু বিগত অনেকগুলো বছর ধরেই আমাদের নির্বাচন কমিশন কেমন যেন রুটিন দায়িত্বের অংশ হিসেবে শুধুমাত্র ভোটের আয়োজনেই সন্তুষ্ট; অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলো কিনা, তা নিয়ে তাদের ‘মাথাব্যাথা’ নেই। গণতান্ত্রিক উৎকর্ষ অর্জনে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন কাঠামোর আমূল সংস্কার আশু কর্তব্য।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও গণতান্ত্রিক উৎকর্ষ সাধনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমরা চলতি দশকেই এসডিজি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; অথচ এসডিজির অন্যতম অভীষ্ট (১৬) শান্তি, ন্যয়বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান নিশ্চিতে কিছু আইনি সংস্কার ব্যতিত জনগণের অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। এখানেও দেশের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচারই নিশ্চিত করা যায়নি! সকলের জন্য সমান আইনি সুযোগ অর্জিত হয়নি। অংশগ্রহণমূলক সামাজিক ও আইনি কাঠামো গঠনে এখনো বহু পথ বাকি। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক উৎকর্ষ সাধনে প্রতিবন্ধক নানা আইন ও নীতিকাঠামোর মাধ্যমে এখনো ভয়হীন, মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার সংকুচিত করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যম ও জনগণের সমালোচনা এবং রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে অবাধে কথা বলার অধিকার বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, যা সকল ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ‘অবিলম্বে এসব বাধা অপসারণ করে জনগণের পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রদানে সকল ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে- যা জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের রুপকল্প ‘সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠন’ এবং অভিলক্ষ্য ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ; পাশাপাশি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী অঙ্গীকারও বটে!’ গণতান্ত্রিক উৎকর্ষ অর্জনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে টিআইবি বলছে, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে গণতান্ত্রিক যাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান মূল্যায়নে একেবারেই স্বস্তিকর কোনো পর্যায়ে যাওয়া যায়নি, যা সত্যিই হতাশার। এই ঘাটতি রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে শুরু করে স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার সুযোগ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে নাগরিকের আইনি ও সামাজিক অধিকারসমূহ সুরক্ষার ক্ষেত্রে সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং শুদ্ধাচার চর্চা সবকিছুর জন্যই প্রযোজ্য। তাই বাস্তবতাকে অস্বীকার না করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে টেকসই করতে এবং দেশের শাসনব্যবস্থাসহ সকল রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সুস্থ্য গণতান্ত্রিক চর্চার পূর্ণ বিকাশে এখনই সর্বোচ্চ শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে।