চৌগাছার একঝাঁক পরিচ্ছন্নকর্মী পৌরসদরকে পরিস্কার রাখতে থাকেন ব্যস্ত

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ আমরা ঋষি সম্প্রদায়, সমাজের নিচু শ্রেনীর মানুষ, কাজকেই আমরা বেশি মূল্যয়ন করি তাইতো কাক ডাকা ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত পরিবারের অন্য সদসদের ঘরে রেখে জীবিকার সন্ধানে বের হই বাইরে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখি পৌরসভার সব সড়ক গুলোকে। কথাগুলো বলছিলেন চৌগাছা পৌরসভায় কর্মরত পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। চৌগাছা উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে বসবাস ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষের। বাঁশের তৈরী হরেক রকমের জিনিস পত্র তৈরী করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। এ ছাড়া সমাজের বেশ কিছু কাজ আছে যা অন্য মানুষের পক্ষে সম্ভব না হলেও সেই কাজ করেন ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা। তারা সমাজের বৃত্তবানদের বসত বাড়িতে সেফটিক ট্যাংক পরিস্কার থেকে শুরু করে এহেন কোন কাজ নেই যে তারা করেনা। বুট পালিশ করা তাদের পেশার মধ্যে অন্যতম একটি পেশা। তাদের কল্যানে সমাজের অন্য সব ধর্মের মানুষেরা পেয়ে থাকেন পরিচ্ছন্নতা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টা চৌগাছা পৌরসভায় কর্মরত অন্তত ২০ জন পরিছন্নকর্মী বাসায় অন্য সদস্যদেরকে রেখে তারা ঘর থেকে বের হয়েছেন বাজার ঝাড়– দিতে। দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে এই পরিচ্ছন্নকর্মীরা গোটা পৌর সদরে ঝাড়– দিয়ে পরিস্কার করার পর ফিরবেন বাড়িতে। এই কাজ করতে তাদের মধ্যরাত পর্যন্ত কেটে যাবে, কিন্তু চেহারায় নেই কোন ক্লান্তির ছাপ, ছোট কাজ করার কারনে নেই কোন কষ্ট, তারা একটি বিষয় বোঝেন এটি তাদের পেশা, এই কাজ করার পর মাস শেষে যে বেতন পাবেন, তাই নিয়ে সংসারের অভাব ঘোচাবেন। কাজে ব্যস্ত সকল সদস্য তারপরও সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে থেমে যান তারা। এসময় কথা হয় পরিচ্ছন্নকর্মীর নেতা রুপালী রানীর সাথে। তিনি বলেন, আমি যখন আমার মায়ের কোল আলোকিত করে সুন্দর এই পৃথিবীতে এসেছিলাম, তখন কিন্তু আমি সমাজের নিচু না উঁচু পরিবারে জন্ম নিয়েছি কিছুই জানিনা। এরপর যখন আস্তে আস্তে বড় হয়েছি, তখন দেখেছি আমি নিচু জাতের ঘরে জন্ম নিয়েছি। আমার কি পেশা, কি করলে এই সমাজে আমি বেঁচে থাকবো, সব কিছুই ধীরে ধীরে জানতে পারি। অভাব অনাটনের সংসার তাই পারিনি লেখাপাড়া শিখতে, যার কারনে বাবা দাদাদের পেশাকে আগলে ধরেছি, শিখেছি কাজকে মূল্যায়ন করতে। সপ্তাহে ৬ দিন রাত ৮ টা বাজলেই সকলেই পোষাক পরে ঝাঁড়– আর ময়লা বহনের ভ্যান নিয়ে বের হয়ে পড়ি সড়কে। সারাদিন এই বাজারে যত মানুষ আসেন, যত ব্যবসায়ীরা আছেন তারা যে নোংরা করেন আমরা গভীর রাত পর্যন্ত তা পরিস্কার করি। এখানে কোন কষ্ট নেই কারন এটিই তো আমার পেশা। মাস শেষে মেয়র স্যার আমাদের যে বেতন দেন তাতে চলে সংসার। দলের অন্য সদস্য অনিল কুমার, দিপক কুমার, সরজিত দাস, সুধির কুমার, অনক কুমার, শ্যামল কুমার, স্বরস্বতি রানী, ভানু বালা, শিউলী রানী, রাধা রানী, সুমনা রানী বলেন, আমরা পরিচ্ছন্ন কর্মী, পৌরসভায় কাজ করি এটিই আমাদের পরিচয়। আমরা যে ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষ কখনও মনে করিনা, এই সমাজের সব শ্রেনীর মানুষের কোন না কোন উপকারে এগিয়ে যায়, যার কারনে জীবনটা ধন্য বলে অনেক সময় মনে হয়। দলের পুরুষ সদস্যরা বলেন, রাতে পৌরসভার এই কাজ করি আর দিনে ভ্যান চালানো বা অন্য কোন পেশায় সময় পার করি। যার করানে আমাদের বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। আর বাড়ির মহিলারা রাতে ঝাঁড়–র কাজ করার পাশাপাশি দিনে সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকেন। দিনে সময় পেলে তারাও কোন না কোন পেশায় যুক্ত হয়ে পড়েন। এ ভাবেই আমাদের একটি দিন যায় রাত আসে আবারও দিন।