যন্ত্রণায় শিশুদের ছটফট, উদ্বিগ্ন বাবা-মা

0

মরিয়ম চম্পা॥ ইমাম মাহবুবের দুই ছেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত। ছোট ছেলে সাঈদের বয়স মাত্র ৯ মাস। বড় ছেলে আসাদের বয়স ৭ বছর। ঢাকা শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ৪০ এবং ৩৮ নম্বর পাশাপাশি দুই বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে তারা। বড় ছেলে আসাদ ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে আছে। শিশু সাঈদ হাতে লাগানো ক্যানুলার যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো। ছোট ছেলেকে শান্ত করতে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের মা। দুই ছেলের চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের বাবা-মায়ের।
আগারগাঁওয়ের ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাশাপাশি দুটি ডেঙ্গু ওয়ার্ডের সবগুলোতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু রোগী ভর্তি। মানবজমিনের সঙ্গে কথা হয় শিশুদের বাবা ইমাম মো. মাহবুব এবং তাদের মা উম্মে কুলসুমের সঙ্গে। ইমাম মাহবুব বলেন, গত সপ্তাহে হঠাৎ করে ৯ মাস বয়সী শিশু সাঈদ তাদের মহাখালীর বাসায় প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়। জ্বর কোনোভাবেই কমছিল না। পরবর্তীতে ব্লাড টেস্ট করালে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এ সময় সাঈদের রক্তের প্লাটিলেট ছিল মাত্র ১৪ হাজার। প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় চিকিৎসকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশু হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। গত শুক্রবার তাকে ভর্তি করা হয়। এদিকে ছোট ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে একই ওয়ার্ডে গত শনিবার ভর্তি করা হয় আসাদকে। বর্তমানে আসাদের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। এদিকে শিশু সাঈদেরও রক্তের প্লাটিলেট বেড়ে ১ লাখ ২০ হাজার হয়েছে। সেও এখন কিছুটা শঙ্কামুক্ত। মহাখালীর স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব। তিনি বলেন, আমার কাছে নগদ মাত্র ২০ হাজার টাকা ছিল। অথচ দুই ছেলের চিকিৎসা খরচ মেটাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। যার সবটাই ঋণ করা অর্থ।
সাহালের বয়স সাড়ে সাত মাস। গত সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির বাবা আরিফ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও করোনার কারণে বর্তমানে তিনি বেকার। নিজের কিছু জমানো টাকা দিয়েই চলছে ছেলের চিকিৎসা। তিনি বলেন, মাত্র দেড় বছর আগে আমাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সাহাল আমাদের প্রথম সন্তান। নিজের কোনো উপার্জনের পথ নেই। শিশু সাহালের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। রক্তের প্লাটিলেটও কিছুটা বেড়েছে। তবে খুব বেশি ক্লান্ত হওয়ায় বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু ছেলের চিকিৎসা করাতে সামনের দিনগুলোতে অর্থ কোথা থেকে আসবে এই ভেবে চিন্তিত আরিফ এবং তার স্ত্রী। ২৮ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে ওয়াসিফ। শনিবার ডেঙ্গু ধরা পড়লে অবস্থা খুব বেশি খারাপ হওয়ায় রাত দেড়টার সময় মা স্মৃতি আক্তার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখন অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। দু-একদিনের মধ্যেই ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরতে পারবে বলে জানায় চিকিৎসক। হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে বর্তমানে মোট ৬৩টি শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনদিন আগে ৮০ জন ছিল। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যত শিশু ভর্তি হচ্ছে করোনার ক্ষেত্রে তার সংখ্যা অনেক কম ছিল বলে জানায় সূত্রটি। হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক ডা. জোহরাফ মুনা বলেন, আগে আমাদের আলাদা কোনো ডেঙ্গু ওয়ার্ড ছিল না। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ১৫ দিন আগে হাসপাতালটিতে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথমে একটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করলেও এখন সেটা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে পুরো ওয়ার্ডটিই আমাদের নিয়ে নিতে হবে। ঢাকা শিশু হাসপাতালই নয়, ডেঙ্গু চিকিৎসা হয় এমন সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালেও ভর্তি হচ্ছে শিশু রোগী। এ ছাড়া সাধারণ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিন।