নাগরিক সমাবেশ থেকে আসিফ নজরুলের ফেসবুক স্ট্যাটাসের সমর্থন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নাগরিক সমাবেশ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের দৃশ্যের চেয়ে ঢাকা বিমানবন্দরের দৃশ্য আরো ভয়াবহ হবে বলে মন্তব্য করেছেন সমাবেশের নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর শাহবাগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও বন্দী ছাত্রনেতাদের মুক্তি দাবি এবং সভা-সমাবেশে দমন-পীড়ন ও অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে হুমকি-হয়রানীর প্রতিবাদে এ নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘যে জাতি সম্মান দিতে জানে না সেই জাতির কপালে বিপর্যয় আছে। সাহসী শিক্ষকের প্রতি যা হচ্ছে তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায় আছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে আপনার একটা নৈতিক দায়িত্ব আছে। যারা আসিফ নজরুলের প্রতি অন্যায় করেছে, অন্যায় বহাল রেখেছে তাদের পক্ষ থেকে পাবলিকলি আসিফ নজরুলের কাছে ক্ষমা চান। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে একটা উদাহরণ সৃষ্টি হবে। আপনার টেন্টাররা এসব থেকে শিখবে। আদব-কায়দা শিখবে। আদব-কায়দা না শিখলে জাতির উন্নতি হয় না।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘আপনি কথা দিয়েছিলেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ছাত্রদের নামে কোনো মামলা হবে না। তিন বছর ধরে সে মামলা ঝুলছে। আপনার কথার মূল্য না থাকলে দেশবাসী যাবে কোথায়? একই ভাবে নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদ করায় আটক ৫৪ জন ছাত্রকে এখনো জামিন দেননি। শুধু জামিন না, এসব মামলা প্রত্যাহার করা উচিত। তবেই কাবুলের দৃশ্য দেখতে হবে না। নয়তো কাবুলের দৃশ্য পুনরাবৃত্তি হওয়া আশ্চর্যজনক কিছু হবে না।’ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আসিফ নজরুল তার স্ট্যাটাসে কারো নাম বলে নাই। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। নাম না বললেও ওরা (আওয়ামী লীগ) বুঝেছে যে আসিফ নজরুল ওদের কথা বলেছে। আসিফ নজরুল যা বলেছে তা প্রত্যেক মানুষের মনে ব্যানার হয়ে ঝুলছে। বাংলাদেশে যদি ঠিকঠাক মতো নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে অবস্থা কাবুলের থেকে ভয়াবহ হবে।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ক্ষমতা থেকে নামলে তাদের (আওয়ামী লীগ) পরিণতি আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের মতোই হবে। প্লেনের চাকা ধরে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। এখনো সময় আছে, পদত্যাগ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। জনগণ হয়তো আপনাদের ক্ষমা করবে। নয়তো এদেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।’
ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘শিক্ষকসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে এই দুর্বৃত্তায়নের আমলে দুর্বৃত্তি, অন্যায়, অবিচা দুশাসন নিয়ে কথা বলছেন, তিনি হচ্ছেন আসিফ নজরুল স্যার। তিনি যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তা কি অবাস্তব কথা? সাহস থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখেন, অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, জেএসডির কার্যকরী সভাপতি সা কা ম আনিছুর রহমান খান, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, রাষ্ট্রচিন্তার অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহিদ উল্লাহ কায়সার, সদস্য ডা: জাহিদ উর রহমান, নাগরিক মহিলা ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক পেরদেওসী আক্তার, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন, যুব অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মনজুর মোর্শেদ মামুন, শ্রমিক অধিকার পরিষদদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা নগর আহ্বায়ক সৈকত আরিফ প্রমুখ। ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে’- ড. আসিফ নজরুলের এই ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। স্ট্যাটাসটিকে কেন্দ্র করে গত বুধবার দুপুর দেড়টায় ছাত্রলীগ এবং বিকাল পৌনে ৫টায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে তালা খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর আবেদন করলে পাঁচটার দিকে তালা খুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করে ছাত্রলীগ।