আস্থা বাড়ছে শেয়ারবাজারে, গড়ছে নতুন রেকর্ড

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দীর্ঘমন্দা ও করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশের শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা বিরাজ করছে। ফলে সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধন একের পর এক নতুন রেকর্ড গড়ছে। জানান দিচ্ছে তার নিজস্ব গতি। মূলত শেযারবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ এবং বিনিয়োগ পরিবেশ বজায় থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শেয়ারবাজারে গতিশীলতা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।
শেয়ারবাজারের এ উত্থানকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বর্তমানে ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে রয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কম আছে। ফলে বর্তমানে বিনিয়োগের বিকল্প উৎস হেয়ে উঠেছে শেয়ারবাজার। এছাড়া কোভিডের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ভালো পারফরমেন্স ও লভ্যাংশ প্রদান, জিডিপির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি, সর্বোচ্চ রিজার্ভ এবং উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেই সঙ্গে বিএসইসি’র বিভিন্ন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে আগ্রহী করে তুলেছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনে শেয়ারবাজার আরও গতিশীল হবে। তখন সূচক সাত হাজার পয়েন্টের মাইলফলক অতিক্রম করতে পারে। আর লেনদেন ছাড়িয়ে যেতে পারে ৩ হাজার কোটি টাকা। এমন প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে লেনদেন বন্ধ হওয়ার আগ মুহর্তে উভয় শেয়ারবাজারে গতিশীলতা জানান দিচ্ছে। সূচক ও লেনদেনে ইতিবাচক প্রবণতা বজায় রাখাসহ গড়ছে নতুন নতুন রেকর্ড। রোববার (১৮ জুলাই) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়ে অবস্থান নেয় ৬ হাজার ৩৬৫.১১ পয়েন্টে। ডিএসইর ইতিহাসে এটি সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগে ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর এই সূচক সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৩৩৬.৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। ১৮ জুলাই ডিএসই-৩০ সূচক বেড়ে অবস্থান নেয় ২ হাজার ৩০৬.০২ পয়েন্টে। ডিএসই’র ইতিহাসে এটাও এই সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। এদিন ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৩২লাখ ৩১১ কোটি টাকা। ডিএসই’র ইতিহাসে এটা সর্বোচ্চ বাজার মূলধন। একইসঙ্গে এদিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বাজার মূলধনও রেকর্ড গড়ে অবস্থান নেয় ৪ লাখ ৫৪ হাজার ১৫ কোটি টাকায়।
বিগত কয়েক বছরের মতো ২০২০ সালের শুরু থেকে শেয়ারবাজারের ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় করোনা মহামারির ধাক্কা। টালমাটাল শেয়ারবাজারকে সামাল দিতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিএসইসি’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তার জিরো টলারেন্স নীতিতে ছয় মাসের মধ্যেই ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করে দেশের শেয়ারবাজার। এর মধ্যে দেশে করোনার চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যেও চলতি বছরের মে মাসে বিশ্বের অন্যান্য শেয়ারবাজারগুলোকে পেছনে ফেলে শীর্ষ তালিকায় স্থান পায় বাংলাদেশের শেয়ার বাজার। রিটার্নের দিক দিয়ে তৃতীয়বারের মতো দেশের শেয়ারবাজার বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় স্থান পায়। এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে ও অক্টোবরে মাসেও বিশ্বের সেরা স্থান দখল করেছিল দেশের শেয়ারবাজার। এশিয়ান ফ্রন্টিয়ার জার্নালের প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মো. রবিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে শেয়ারবাজার ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা অনেক আশাবাদী। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতাও করপোরেট কালচার প্রতিষ্ঠিত হলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে আসবেন। তবে ডিএসইর সার্ভার জটিলতার কারণে সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধন বৃদ্ধির গতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তা না হলো সূচক, লেনদেনসহ বাজার মূলধনে আরো রেকর্ড বাড়তো। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ডিএসই’র আইটি বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট ও পরিচালনা পর্ষদ এ ঘটনার দায়ভার এড়াতে পারে না। রোববার বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে শেয়ারববাজার যেভাবে এগিয়ে চলছিল, কারিগরি ত্রুটির ঘটনায় তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়টি বিএসইসি’র কঠোরভাবে দেখা উচিত।’
ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘শেয়ারবাজার গতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায় শেয়ারবাজার ধীরে ধীরে এ অবস্থানে এসেছে। ব্যাংকও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কম থাকায় মানুষ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আর অনেক কোম্পানির পারফরমেন্স ভালো রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে লভ্যাংশও দিয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়েছেন। এছাড়া বিএসইসি’র বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারকে আরো গতিশীল করে তুলেছে।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন বাজারে বিনিয়োগকারীরা নিস্ক্রিয় ছিল। তাদের অংশগ্রহন ছিল না। এখন বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা সম্প্রসারন হচ্ছে না। ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে রয়েছে এবং সুদের হারও কম। ফলে বর্তমানে বিনিয়োগের বিকল্প উৎস হয়ে উঠেছে শেয়ারবাজার। সূচক ৭-৮ হাজার পয়েন্টে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ৬ হাজার সূচক নিয়ে বিনিয়োগকারীদের যে ভীতি ছিলা, তাও কেটে গেছে। বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক বেড়েছে। দেশের শেয়ারবাজার এখন আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষপটে শেয়ারবাজার গতিশীল অবস্থানে রয়েছে। বিএসইসির নেওয়া বিভিন্ন ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কারণে শেয়ারবাজার গতিশীল হয়েছে এবং অর্থের যোগান বেড়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের বিতরণ না হওয়া লভ্যাংশ নিয়ে গঠিত ২০ হাজারকোটি টাকার ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। যার ইতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়েছে। এছাড়া দুর্বেল কোম্পানিগুলোকে সবল করতে পর্ষদ পুনর্গঠনের কাজ করছে বিএসইসি। এটা বাজারের জন্য ইতিবাচক উদ্যোগ। ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। আসন্ন জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোও ভালো লভ্যাংশ দিবে এমটি শোনা যাচ্ছে। ফলে নতুন ও পুরোনো বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারমুখী হচ্ছেন।’