স্বেচ্ছাসেবী তিন স্বাস্থ্য কর্মীর নমুনা সংগ্রহ বাণিজ্যে প্রতারিত হচ্ছে যশোরের মানুষ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোরে স্বেচ্ছাসেবী নামে বাড়ি বাড়ি করোনার নমুনা সংগ্রহ করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে শাহরিয়ার হাসান নামে কথিত স্বাস্থ্যকর্মী এক যুবকের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতারক চক্র। যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা তিন সদস্যের প্রধান শাহরিয়ার হাসান কখনো নিজেকে সিভিল সার্জন অফিসের ‘মেডিকেল টেকনোলজিস্ট’ কখনো সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ‘দায়িত্বশীল’ পরিচয় দিয়ে থাকে। চক্রটি বাড়ি বাড়ি নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে দুই তিন গুণ বেশি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তারপরও নমুনা সংগ্রহ করে জমা দিচ্ছে না এমন অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। শাহরিয়ার হাসান যশোর শহরের পুরাতন কসবা পালবাড়ি গাজির ঘাট এলাকার আব্দুস সাত্তারের পুত্র। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সরকার হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের জন্যে ১০০ টাকা এবং বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের জন্যে ৩০০ টাকা ফি নির্ধারণ করেছে। এক সময়ের আউট সোসিং কর্মী শাহরিয়ার হাসান বর্তমানে যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কথিত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কর্মরত। তার নেতৃত্বে তিন সদস্য বাড়ি থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে। এলাকাবাসী শাহরিয়ার হাসান ও তার দুই সদস্যের বিরুদ্ধে বাড়তি অর্থ আদায়ের পাশাপাশি প্রতারণার ব্যাপক অভিযোগ করেছেন। তারা ৩০০ টাকা ফি’র পরিবর্তে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা নিচ্ছে এবং কোন প্রকার রশিদ দিচ্ছে না। এমনকি পুরো টাকা আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে কিছু নমুনা জমা না দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যার কারণে ফলাফলের তালিকায় নিজের নাম-ঠিকানা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন নমুনা প্রদানকারী ও তাদের স্বজনরা।
অভিযোগে আরো জানা গেছে, তাদের কেবলমাত্র সদর উপজেলার মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করার অনুমতি থাকলেও এ চক্র প্রচার করছে অন্যান্য উপজেলা থেকেও নমুনা সংগ্রহের অনুমতি রয়েছে। এক্ষেত্রে উপজেলাভিত্তিক একটা ফি ধার্য করেছে তারা। এ চক্রের ধার্য করা ফিস হচ্ছে- মণিরামপুর থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্যে এক হাজার টাকা, কেশবপুর থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য বাড়তি আরও ১০০ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি শাহরিয়ার হাসান শহরের বেজপাড়ার থেকে রাজু আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের পর নির্দিষ্ট সময়ে ফলাফল দিতে না পারায় মারধরের শিকার হন।
নাসিরুল ইসলাম নামে যশোর শহরের এক জন ওষুধ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, তার পরিবারের তিন জনের নমুনা সংগ্রহ করে এ চক্র। তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর গত মঙ্গলবার ফোন করা হলে জানিয়ে দেয় তাদের নমুনা নষ্ট হয়ে গেছে। টাকা দেয়ার রশিদ না থাকায় তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে কোন অভিযোগ করতে পারেননি।
এমন প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর আবু মাউদ বলেন, সে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে। অপকর্মের দায়ভার আমরা কীভাবে নেব? তবে, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একই বিষয়ে সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন জানতে পারলাম, খতিয়ে দেখব। সঠিক হলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
অভিযুক্ত শাহরিয়ার হাসান বলেন, সরকার আমাদের কোন টাকা পয়সা দেয় না। গাড়ি ভাড়া বা যাতায়াত ভাড়ার জন্যে বাড়তি টাকা নিয়ে থাকি।