ইয়াস : নদীর পানি বেড়ে কয়রায় বাঁধ উপচে ঢুকছে পানি

0

খুলনা সংবাদদাতা॥ ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনার কয়রা উপকূলের নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ছে। এতে উপজেলার দুর্বল বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে উপচে পানি প্রবেশ করছে। তবে পানি আরও বৃদ্ধি পেলে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন উপকূলবাসীরা। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বুধবার (২৬ মে) আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সে সময় ভরা পূর্ণিমা থাকবে। উপকূলের উপজেলা নদ-নদীতে জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পূর্ণিমার সময় বাড়ে। ভরা পূর্ণিমায় জোয়ারের উচ্চতা পাঁচ থেকে সাত ফুট বৃদ্ধি পায়। তখন ঝড়ের প্রভাবে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে বলে পাউবো সাতক্ষীরা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলায় ১১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেকসইভাবে নির্মাণ করা হয়নি। বাঁধগুলো অত্যন্ত দুর্বল ও ভঙ্গুর। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধের কাজ হয়েছে তবে সব জায়গায় হয়নি। উপজেলার ২০ কিলোমিটার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দেড় থেকে দুই হাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বাঁধের অনেক জায়গা ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করছে। কোথাও কোথাও ওভার ফ্লো হয়ে পানি প্রবেশ করছে। জোড়াতালির বেড়িবাঁধ, দীর্ঘমেয়াদী ও সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের অভাব। এর মধ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। এতে আতঙ্ক বেড়ে গেছে এসব এলাকার মানুষের। বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে কয়রা সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা ক্লোজারের দক্ষিণ পাশ থেকে উত্তর বেদকাশী স্লুইচগেট পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার, মদিনাবা লঞ্চ ঘাট হতে লোকা পর্যন্ত এক কিলোমিটার, কাশি খালের গোড়া থেকে কাঠমারচর পর্যন্ত এক কিলোমিটার, মাটিয়া ভাঙ্গায় আধা কিলোমিটার, আংটিহারায় এক কিলোমিটার, বীণাপাণি গাতির ঘেরিতে দুই কিলোমিটার, দশালীয়া থেকে হোগলায় তিন কিলোমিটার, মহেশ্বরীপুর নয়নীতে আধা কিলোমিটার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
কয়রা সদর উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা আবু হানিফ বলেন, ‘ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় কর্তৃপক্ষের বাঁধ নির্মাণে টনক নড়ে। ঝড় থেমে গেলে তাদের আর খবর থাকে না। বর্ষা মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ কারণে বাঁধের স্থায়িত্ব থাকে না। বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি করা না হলে উচ্চ জোয়ারে বাঁধ প্লাবিত হয়ে বাজার এলাকা প্লাবিত হবে।’ এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, ‘কয়রা উপজেলায় ২৬টি পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় আমরা সদা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। বেড়িবাঁধের যেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ সেসব স্থানে পাউবো ও স্থানীয়দের মাধ্যমে সাময়িকভাবে প্রতিরক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কাজে লাগাতে ২০ হাজার জিও ব্যাগ ও ৩০ হাজার সিনটেথিক ব্যাগ প্রস্তুত রেখেছি।’ কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বরদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনার মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ও ১১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হবে। পর্যাপ্ত চাল শুকনো খাবার নিরাপদ পানি ও নগদ টাকা মজুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে কাজ করছেন রেডক্রিসেন্ট, সিপিপি ও বেসরকারি এনজিওর স্বেচ্ছাসেবকরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার মানুষ ও সবার ভয় দুর্বল বেড়িবাঁধ। শুনেছি বেড়িবাঁধগুলো পাকিস্তান আমলের। টেকসই বেড়িবাঁধ কোথাও নেই। বর্তমানে কয়রার সিংহভাগ বাঁধ পানিপ্রবাহ প্রতিহত করার জন্য মোটেই উপযোগী নয়। প্রয়োজনে কাজে লাগাতে ১৭০০ জন শ্রমিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’