গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৬

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ফিলিস্তিনজুড়ে চলমান অস্থিরতার মধ্যে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া বিমান হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। অপরদিকে জেরুসালেমসহ অধিকৃত পশ্চিম তীর ও ইসরাইলি ভূখণ্ডে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন ফিলিস্তিনিরা। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত পূর্ব জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লায় স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইহুদি বসতি স্থাপনে ইসরাইলি আদালতের আদেশের জেরে গত এক সপ্তাহ পুরো ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে উত্তেজনা চলে আসছে। ফিলিস্তিনিরা ওই আদেশের প্রতিবাদে জেরুসালেমসহ পশ্চিম তীর, গাজা ও ইসরাইলে বিক্ষোভ অনুষ্ঠান করে আসছেন। জেরুসালেমে বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনিদের দমনে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী শুক্রবার থেকে মসজিদুল আকসাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে আসছে। ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় সোমবার পর্যন্ত ছয় শ’র বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
মসজিদুল আকসায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলার জেরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বেশ কয়েকবার ইসরাইলকে সহিংসতা থেকে বিরত হওয়ার জন্য সতর্কতা জানায়। সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় মসজিদুল আকসা ও শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার জন্য ইসরাইলকে আলটিমেটাম দেয় হামাস। আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি ভূমি লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু হয়। হামাসের হামলার জেরে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুসারে, ইসরাইলের বিমান হামলায় নয় শিশুসহ ২৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরো এক শ’ আটজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা গাজায় ১৩০ সামরিক ‘লক্ষ্যব্স্তুতে’ আঘাত করেছে এবং হামাস ও ইসলামি জিহাদের ১৫ সদস্যকে হত্যা করেছে।
এদিকে গাজা সীমান্তে প্রতিরক্ষায় পাঁচ হাজার সৈন্যকে অগ্রসর হওয়ার আদেশ দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক আদেশ জারি করা হয়েছে। সোমবার ইসরাইলের ১৯৬৭ সালে পুরো জেরুসালেম দখলের স্মরণে জেরুসালেম দিবস পালন করা হয়। দিবসের কর্মসূচি হিসেবে পুরনো শহরে ইসরাইলিদের পদযাত্রার কথা থাকলে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের ফলে তা বাতিল করা হয়। এদিকে ফিলিস্তিনে সহিংসতার জেরে সোমবার জরুরি এক বৈঠকে বসেছে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ। তবে বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র জানায় কোনো প্রকার বিবৃতিতে পরিস্থিতির উন্নতিতে হিতে বিপরীত ফল হতে পারে। জেরুসালেমে শেখ জাররাহ মহল্লার বাসিন্দাদের উচ্ছেদের আদেশের বিরুদ্ধে পশ্চিম তীর ও ইসরাইলি ভূখণ্ডে অব্যাহত বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরাইলের প্রধান শহর তেল আবিবের কাছাকাছি আল-লিদ শহরে বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলি পতাকা খুলে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে দেয়। গত ২৫ এপ্রিল জেরুসালেমের ইসরাইলি ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ছয় ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাদের বাড়ি ইসরাইলি নাগরিকদের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন। এতে করে ১০ শিশুসহ ৪০ ফিলিস্তিনি বাসিন্দা তাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের বাস করা ঠিকানা থেকে উচ্ছেদের শঙ্কায় রয়েছেন। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর মসজিদুল আকসাসহ পূর্ব জেরুসালেম ইসরাইল দখল করে নেয়। আন্তর্জাতিক আইনে অধিকৃত ভূমি হিসেবে বিবেচিত হলেও ইসরাইল শহরটিকে একীভূত করে নেয় এবং অখণ্ড জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। বিভিন্ন সময় শহরটিতে থাকা ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইসরাইলি ইহুদিদের শহরে আবাসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।
সূত্র : আলজাজিরা