আগুনে পুড়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ লাখ টাকা ছাই

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ‘আগুন যখন লাগে তখন আমি উত্তরা বিমানবন্দর এলাকায় ছিলাম। আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে আসি। হাসিনা মার্কেটের কাঠের পাটাতনের উপর দোতলায় আমার গদিঘর। সেখানে আমার ব্যবসার সব টাকা ছিল। শুক্র-শনিবার পড়ায় ওই টাকা আমি ব্যাংকে রাখতে পারিনি। আজ রোববার সেই টাকা ব্যাংকে জমা করার কথা ছিল। কিন্তু রাতের আগুনে আমার ৩৫ লাখ টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’ রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাগো নিউজকে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের হাসিনা মার্কেটের আড়তদার বাচ্চু খান।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৮ মিনিটে কারওয়ান বাজারের হাসিনা মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘণ্টাব্যাপী প্রচেষ্টায় রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। এ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বাচ্চু খানসহ আরও অনেক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। কারওয়ান বাজারের হাসিনা মার্কেটে দুই দশক ধরে পাইকারি লুঙ্গির ব্যবসা করেন আনোয়ার হোসেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তার কাছে এখনো পাঁচ লাখ টাকা পাবে ব্যাংক। এর মধ্যে গতকাল শনিবার লাগা আগুনে গোডাউনে থাকা তার ১৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘১৮ বছর ধরে কারওয়ান বাজারে ব্যবসা করছি। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন করেছিলাম। এখনো ব্যাংকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণী। পোড়া মালামাল ছাড়া আমার গোডাউনে আর কিছুই বাকি নেই। এখন ব্যবসা করবো কীভাবে? সংসারই বা চলবে কীভাবে? কী খেয়ে থাকব আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না!’
রোববার দুপুরে হাসিনা মার্কেটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটটিতে মোবাইলের দোকান, সবজির দোকান, লুঙ্গির গোডাউন, বিকাশের দোকান, প্লাস্টিকের দোকান পুড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া সেই দোকান থেকে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে পরিষ্কার করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ সময় নগদ পুঁজি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানান বেশ কয়েকজন আড়তদার। হাসিনা মার্কেটের ছয়টি দোকানের মালিক মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার ছয়টি দোকানের সম্পূর্ণ মালামাল ও নগদ টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন লাগার সময় আমি নামাজ পড়ে হোটেলের ক্যাশে বসেছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম, গাছের মধ্যে আগুন। এরপর মুহূর্তেই আমার দোকানের উপরে ও টিনে আগুন দেখতে পাই। দোকানের ফায়ার স্টিং গুইসার দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে আগুন আরও বেশি করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। নাহলে আশপাশের আরও অনেক কিছু দোকান পুড়ে যেত।’ হাসিনা মার্কেটের ‘পিতা-মাতা রেস্তোরাঁয় রাতের জন্য মাছ, মাংস ও সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের তরকারি রান্না করা হয়েছিল। রান্না শেষে সেগুলো বড় বড় পাত্রে সাজানো ছিল। তীব্র আগুনে খাবারের পাত্র না পুড়লেও খাবারগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পিতা-মাতা রেস্তোরাঁর হোটেল বয় মো. ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘হোটেলের ৬০-৬৫ হাজার টাকার খাবার পুড়ে গেছে। এছাড়া পুড়েছে হোটেলের চেয়ার-টেবিল ও ক্যাশবাক্স।’
হাসিনা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, গতকালের আগুন দিয়ে এ পর্যন্ত তিনবার আগুন লাগলো। গতবার এই মার্কেটে লাগা আগুনে প্রায় সব দোকান পুড়ে গিয়েছিল। তার আগেরবারও প্রায় পুরো মার্কেটের দোকানই পুড়ে যায়। গতকালের আগুনে প্রায় সব ব্যবসায়ীই পথে বসেছে। এক ব্যবসায়ী গতকাল তিনবার স্ট্রোক করেছেন। কিন্তু দফায় দফায় আগুনে এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হলেও সরকার থেকে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাননি বলে জানান তারা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেবাশিষ বর্ধণ বলেন, ‘প্রথমে যখন আমরা খবর পাই, তখন দুটি ইউনিট পাঠানো হয়। আগুনের ভয়াবহতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিট বাড়ানো হয়। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। একে একে আটটি ইউনিট কাজে লাগানো হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মার্কেটটি কাঠের পাটাতনে দোতলা করা হয়েছে। নিচে দোকান উপরে থাকার জন্য ঘর তৈরি করা হয়েছে। প্রচুর দাহ্যপদার্থ ছিল। লেপ-তোশকের দোকানও ছিল। ভেতরে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। যে কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’