নড়াইলে কর্মসৃজন প্রকল্পে হরিলুট

0

নড়াইল সংবাদদাতা॥ ২০২০-২১ অর্থবছরে নড়াইলের কালিয়ায় অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ৪০ দিনের কাজে শ্রমিকের তালিকা প্রস্তুতে অনিয়ম, শ্রমিক অনুপস্থিতি, তদারকির অভাব ও হরিলুটের পরিকল্পনায় প্রকল্প ভেস্তে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে- অনুপস্থিত শ্রমিকদের হাজিরা দেখিয়ে কাজ শেষ না করেই শ্রমিকদের ৩৫ দিনের মজুরির টাকার বড় অংশই সংশ্লিষ্টরা হরিলুট করে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে গৃহীত কিছু প্রকল্পে গত ৩৫ দিনে শুরু করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। সিংহভাগ প্রকল্পেই আংশিক কাজ করে মেয়াদ শেষের আগে ৩৫ দিনের মাথায় গত ৩০ ডিসেম্বর কর্মকর্তারা প্রকল্পগুলোর কাজ স্থগিত করে দিয়েছেন। এছাড়া শ্রমিকের তালিকা প্রস্তুতে সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে শিশুশ্রমিক দিয়ে মাটি কাটার কাজ করানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জন্য চলতি অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের বাস্তবায়নাধীন কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রথমপর্যায়ে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৪৮টি প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়। ওই সব প্রকল্পের অনুকূলে ১ হাজার ২৩৯ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। সরকারি বিধান অনুযায়ী- এসব প্রকল্পের একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৩৫ ঘনফুট মাটি কাটার বিনিময়ে ২০০ টাকা হারে মজুরি পেয়ে থাকেন। গত বছর ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ৪০ দিনের ওই কর্মসূচির কাজ চলতি বছর ৬ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। বিভিন্ন ইউনিয়নে ওই সব প্রকল্পের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, গত ৩৫ দিনে পেড়লী ইউনিয়নের ৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৩টি প্রকল্পেই কাজের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। দু’টি প্রকল্পের কাজ আংশিকভাবেই শেষ করা হয়েছে। প্রকল্প চেয়ারম্যানরা বলেছেন, শ্রমিক নিয়োগ ও স্থানীয় সমস্যার কারণে তারা কাজ করতে পারেননি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে বারবার জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি।
চাচুড়ী ইউনিয়নের ৪টি প্রকল্পের মধ্যে ২টি প্রকল্পের কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। ওই ইউনিয়নের ‘দাদনতলা মিজান মোল্যার বাড়ি থেকে শামছু মোল্যার ঘের অভিমুখী রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন’ প্রকল্পে গিয়ে ২২ জন শ্রমিকের স্থলে ৩ শিশুসহ ১০ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশুরা বদলি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি বাচ্চু মিয়া বলেন, ১৪ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে থাকেন। বাকি আট জন শ্রমিক অফিসের হিসেবে রয়েছে। এর বেশি আর কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। শিশুশ্রমিক কাজ করে কিনা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। একই ইউনিয়নের ‘কৃষ্ণপুর মুরালী বিশ্বাসের বাড়ি হতে বিল্লাল খার বাড়ি অভিমূখী রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন’ প্রকল্পে গিয়ে ২২ জন শ্রমিকের স্থলে ১৭ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রবিউল ইসলাম বিপুল বলেন, প্রকল্পের কাজ চলছে। শ্রমিক অনুপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রমিক অনুপস্থিতির কারণে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর কাজ বেশিরভাগই আংশিক সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিকের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের কারণে অনেকেই প্রকল্পের কাজে যোগ দেন না। যে কারণে গত ৩৫ দিনে উপজেলার বেশিরভাগ প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ করেই বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেক সংশ্লিষ্টরা তুলে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাছরিন সুলতানা বলেন, জেলার তিনটি উপজেলার দায়িত্বে থাকার কারণে সব কিছুর খেয়াল রাখা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, অনিয়ম ও নানা সমস্যার কারণে উপজেলার কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি হলে আবার কাজ শুরু করা হবে।