হোয়াইট হাউসের কর্মীদের এখনই ভ্যাকসিন নয় : ট্রাম্প

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার থেকে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রথম দফার ভ্যাকসিন কর্মসূচির আওতায় হোয়াইট হাউসের কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনই হচ্ছে না। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের কর্মীদের আরও কিছুদিন পরে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এর আগে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের জেষ্ঠ্য সদস্যদের প্রথম দফায় ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হবে। গত শনিবার ফাইজার এবং বায়োএনটেকের তৈরি করোনার ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। এই ঘটনাকে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ভ্যাকসিন বিতরণ তদারকি করার দায়িত্বে থাকা জেনারেল গুস্তাভ পার্না জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সব অঙ্গরাজ্যে ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পৌঁছে যাবে। প্রথম দফায় হোয়াইট হাউস কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এই পরিকল্পনা সমন্বয় করার কথা বলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে করোনার ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা। দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যে প্রথম দফায় ৩০ লাখ ডোজ দেওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার মিশিগানে প্রথম দফায় ভ্যাকসিনের ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে। প্রথমদিকে স্বাস্থ্যকর্মী, বয়স্ক লোকজন এবং করোনার সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে চীনে প্রথম করোনার প্রকোপ ধরা পড়ে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ধরা পড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। গত নভেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৩ হাজার ৩০৯ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বেশি। ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬৭ লাখ ৩৭ হাজার ২৬৭। এর মধ্যে মারা গেছে ৩ লাখ ৬ হাজার ৪৫৯ জন। দেশটিতে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ৯৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৩৯ জন। বর্তমানে সেখানে করোনার অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ৬৭ লাখ ৬ হাজার ৩৬৯। অপরদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ২৭ হাজার ৬১১ জন।
যুক্তরাজ্যে বড় পরিসরে গত মঙ্গলবার থেকে একই ভ্যাকসিনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই কানাডা, বাহরাইন এবং সৌদি আরবে এই ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এদিকে, স্থানীয় সময় রোববার রাতে ভ্যাকসিনের ডোজ নিয়ে একটি কার্গো বিমান কানাডায় অবতরণ করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, সোমবার থেকে যত দ্রুত সম্ভব টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। রোববার রাতে এক টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো লিখেছেন, ফাইজার এবং বায়োএনটেকের প্রথম ব্যাচের কোভিড ভ্যাকসিনের ডোজ কানাডায় এসে পৌঁছেছে। ওই টুইট বার্তার সঙ্গে তিনি একটি কার্গো বিমানের ছবি যুক্ত করেছেন। মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার এবং এর অংশীদারী জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিনের ডোজ ওই বিমানে করেই সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে কানাডার ১৪টি স্থানে ৩০ হাজার ভ্যাকসিনের ডোজ পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রথম ধাপে করোনার বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকজন বিশেষ করে, বয়স্ক লোকজন যারা দীর্ঘদিন ধরে কেয়ার সেন্টারে আছেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা আগে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। শুক্রবার বেলজিয়াম থেকে ভ্যাকসিনের ডোজ পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তা জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র হয়ে কানাডায় পৌঁছেছে। পরবর্তীতে কানাডার বিভিন্ন স্থানে ভ্যাকসিনের ডোজ পাঠানো হবে। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাকসিন কর্মসূচি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র (এনএসসি) জন উলিয়ত ভ্যাকসিন কর্মসূচির বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। জন উলিয়ত বলেন, আমেরিকার জনগণের এ বিষয়ে আস্থা থাকা দরকার যে, মার্কিন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা ভ্যাকসিনের যে ডোজ গ্রহণ করবেন তাদেরও একই ধরনের ডোজ দেওয়া হবে। কিন্তু রোববার ট্রাম্প পরামর্শ দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তিনি এক টুইট বার্তায় বলেন, হোয়াইট হাউসে কর্মরত লোকজনের ভ্যাকসিন কর্মসূচির পরে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা উচিত। তবে বিশেষভাবে প্রয়োজন পড়লে সেটা আলাদা বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। শীর্ষ কর্মকর্তাদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে যেভাবে ভাবা হচ্ছে সেটা ট্রাম্পের এই টুইটের কারণে কতটা প্রভাবিত হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। গত অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন। সে সময় তিনদিন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি।প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনই ভ্যাকসিন নেবেন কীনা সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। যদিও তিনি বলছেন যে, সঠিক সময়েই তিনি ভ্যাকসিন নেবেন।