‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাস্তায় নামাবেন না’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাস্তায় না নামানোর অনুরোধ জানিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ বলেছেন, ‘আমরা যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছি, এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের এই ধরনের কর্মসূচিতে থাকার কথা মোটেও ছিল না। এখন আমাদের থাকার কথা ছিল অফিসে, কর্মে, মাঠে ময়দানে। এটিই আমাদের আসল কাজ, সংবিধান আমাদের সেই দায়িত্ব দিয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশ করা আমাদের কাজ নয়। কিন্তু দুভার্গ্যবশত হলেও সত্য, আজকে আমাদের সেই অবস্থানে আসতে হয়েছে। এই বার্তাটুকু দেওয়ার জন্য আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস দেখাচ্ছেন, তাদের বলছি, আজ আপনারা আমাদের প্রতিবাদ মঞ্চে এনেছেন। আমাদের রাস্তায় নামাবেন না। রাস্তায় নামলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’ শনিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে কর্মরত সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন।
সমাবেশে এ বি এম আজাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ কেবল পরিপূরক নয়, এটি আসলে একই সত্তার দুটি নাম মাত্র। সেই বঙ্গবন্ধুর ওপর যখন আঘাত আসছে তখন বুঝতে হবে এটি বাংলাদেশের ওপর আঘাত। বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতি আঘাত। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি আঘাত। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপরে যে আঘাত, সেটি আসলে আঘাত হিসেবে দেখার কোনও সুযোগ নেই। এটি গভীর ষড়যন্ত্রের একটি নমুনা। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহারিয়ার কবির, মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আশফাকুর রহমান, জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসমাইল হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, এই দুষ্কৃতকারীদের বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের রুখতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে এটি মোকাবিলা করবে। উন্নয়নের যেই মহাসড়কে বাংলাদেশ উঠে গেছে, এই অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশকে ঠেকানো অনেক কঠিন। আমরা বলবো এটি অসম্ভব। ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, যারা হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে, যারা এই প্রতিকৃতি ভেঙে ফেলার পাঁয়তারা করছে তাদের সবার ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজে দেখেন ’৭১ সালে, ’৭৫ সালে তাদের কী ভূমিকা ছিল। এই ভিন্ন শত্রুদেরকে বাঙালি জাতি অতীতে পরাজিত করেছে, সামনেও পরাজিত করবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই স্বাধীন দেশে, স্বাধীনতার এত দিনেও ৪৯ বছরেও এই শক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আঘাত করার উদ্দেশে কেন? বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আঘাত করা মানে বাংলাদেশের ওপর আঘাত করা। যারা বাংলাদেশ চায়নি, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করেছিল, সেই তারাই আজকে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ’৭১ সালের পরাজিত শক্তি এখনও বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। তারা ’৭১ সালে পরাজিত হওয়ার পর ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ওপর আঘাত করেছে। আর এখন যখন বঙ্গবন্ধু কন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন তারা আবার একটি অঘটন ঘটনোর চেষ্টায় লিপ্ত আছে।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আশফাকুর রহমান বলেন, আমরা বিচারক, আমরা পাথর বা জিন নই, আমরাও মানুষ। যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা হয় তখন আমাদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হয়।’ তিনি বলেন, ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে, ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য সাহাবারা যেখানে গিয়েছেন, তারা সেখানের কৃষ্টি কালচার, সংস্কৃতিকে ধারণ করেছিলেন। কিন্তু এখন কিছু মৌলবাদী গ্রুপ সেটি বুঝতেই চাইছে না। ইসলাম কখনও গায়ের জোরে প্রচার এবং প্রসারিত হয়নি। ইসলাম প্রচারিত হয়েছে তার সৌন্দর্যের মধ্যদিয়ে। যেটি না বুঝতে পারার কারণে কিছু ধর্মান্ধ এবং কূপমণ্ডূক জ্ঞানসম্পন্ন কিছু মানুষ আমাদের ইসলাম ধর্মের সম্মান নষ্ট করে দিচ্ছে। এই একটি গ্রুপ পৃথিবীর যে দেশেই উদ্যোগ নিয়েছে, তারা দেশের নয় বরং আমার কাছে মনে হয়েছে তারা ইসলামেরই ক্ষতি করেছে বেশি। তারা জানে না, তাদের জানাশোনা কত কম।