গুরুতর রোগীদের চিকিৎসায় এখনো অনেক ঘাটতি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দ্বিতীয় দফায় বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা মিলছে না। গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসার প্রতিটি ক্ষেত্রেই। ভুক্তভোগীরা জানান, করোনা টেস্ট থেকে শুরু করে হাসপাতালে ভর্তি, আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র সব ক্ষেত্রেই রয়েছে সংকট ও গাফিলতি।
করোনা রোগীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন সহজে করোনা টেস্ট করাতে পারেননি তারা। অনেক বেগ পেতে হয়েছে টেস্ট করাতে। তাদের একজন খিলগাঁও এলাকার সরকারি চাকরিজীবী নজমুজ্জামানের স্ত্রী।
তিনি জানান, তার স্ত্রী নানা রোগে আক্রান্ত। বিছানা থেকে অন্যের সাহায্য ছাড়া উঠতে পারছিলেন না। চিকিৎসক করোনা টেস্টের পরামর্শ দিলেও ব্যবস্থা করতে বেগ পাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তাকে বাইরে নিয়ে টেস্ট করানো ছিল কষ্টকর। বারবার যোগাযোগ করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)’র হটলাইন নম্বরে। সবকিছু শুনে জানিয়ে দেয়া হয়, তার করোনা হয়নি। টেস্টের প্রয়োজন নেই।
ওই দিনই পরিচিত একজনের মাধ্যমে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করে টেস্ট করানো হয় ওই নারীর। পরবর্তীতে রিপোর্ট আসে করোনা পজেটিভ। এভাবেই সাধারণ রোগীরা করোনা টেস্ট করাতে দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ৫০০ শয্যার মুগদা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি আমির আলীর স্বজনরা জানান, সরকারিভাবে করোনা টেস্ট করাতে চরম ভোগান্তি। বাধ্য হয়েই বেসরকারি একটি মেডিকেলের মাধ্যমে টেস্ট করানো হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি হলেও সিট পাওয়া যাচ্ছিল না সহজে। সরকারি হাসপাতালে লাইন বেঁধে দাঁড়ালেও সবার ভাগ্যে টেস্ট জুটে না। ভোগান্তির কারণে অনেকে উপসর্গ নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও টেস্ট করাতে চান না।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় করোনা আক্রান্তদের প্রয়োজন হয় আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয় তাদের। করোনা রোগীদের বিষয়টি অনুধাবন করে প্রতি জেলায় অন্তত ১০টি আইসিইউ চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আইসিইউ পরিচালনার প্রয়োজনীয় জনবল নেই। সংকট কাটাতে ৩৯তম বিসিএস’র দুই হাজার চিকিৎসকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে করোনা সংক্রমণের শুরুতেই। কিন্তু সেখানে আইসিইউ পরিচালনার জন্য এনেসথেসিওলজিস্টের সংখ্যা হাতেগোনা। ফলে আইসিইউ পরিচালনা করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে এনেসথেসিওলজিস্টের ১১শ’ পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ’।
করোনা রোগীদের সেবার জন্য আইসিইউ, ভেন্টিলেটর সুবিধা বাড়াতে জরুরিভিত্তিতে এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিল করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা বিষয়ে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তারপর কয়েক মাস কেটে গেলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথেসিওলজিস্টের সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর ডা. কাওসার সর্দার বলেন, আইসিইউ পরিচালনার জন্য এনেসথেসিওলজিস্ট প্রয়োজন। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ ভাগের অক্সিজেনের দরকার হয়। তাদের মধ্যে অন্তত ১০ ভাগের জন্য আইসিইউ প্রয়োজন হয়। আইসিইউ পরিচালনার জন্যই এনেসথেসিওলজিস্ট প্রয়োজন বলে জানান তিনি। সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এনেসথেসিয়ার চিকিৎসকের অভাবে জেলা পর্যায়ে করোনা রোগীদের সেভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে প্রায় জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ওটি বন্ধ রয়েছে। এসব সংকট বিবেচনা করেই বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথেসিওলজিস্ট পাঁচশত ট্রেনিংপ্রাপ্ত এনেসথেসিয়ার চিকিৎসকের তালিকাসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল। এডহক ভিত্তিতে এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দিয়ে সংকট দূর করার আহ্বান জানান তারা। কিন্তু বিষয়টি আর অগ্রসর হয়নি। দেশের মানুষ যাতে সহজে করোনা টেস্ট, অক্সিজেন, আইসিইউসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।