দরপতনের মধ্যেও আশা দেখাচ্ছেন ওপেক মহাসচিব

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে যেসব পণ্যের বাজারে সবচেয়ে বেশি ধস নামে এর মধ্যে একটি হলো জ্বালানি তেল। বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারকে গত কয়েক মাসে রেকর্ড দরপতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এ অবস্থায় আগামীতে আর যাতে বড় আকারে জ্বালানি পণ্যটির দরপতন না হয় তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে ওপেক প্লাস জোট। আগামী নভেম্বরের শেষের দিকে জোটের নীতিনির্ধারণী সভা থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওপেক মহাসচিব মুহাম্মাদ বারকিনদো। তবে দরপতন বন্ধের এমন আশার কথা শোনানোর একদিন পর গতকালই নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম আরো এক দফা কমেছে। খবর আরব নিউজ ও রয়টার্স
জ্বালানি তেলের অব্যাহত দরপতন ঠেকিয়ে বাজার চাঙ্গা করতে কয়েক বছর ধরে কাজ করছে ওপেক প্লাস জোট। জ্বালানি তেলের রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক ও ওপেকবহির্ভূত দেশগুলো নিয়ে এ জোট তৈরি। যার নেতৃত্বে রয়েছে যথাক্রমে সৌদি আরব ও রাশিয়া। কিন্তু জোট গঠনের কিছুদিনের মধ্যেই এটিতে একের পর এক মতানৈক্যের সুর ওঠে। অনেক দেশ জোটের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী উত্তোলন হ্রাস-বৃদ্ধিতে রাজি না হওয়াসহ নানাবিধ অনৈক্য দেখা যায়। এসব কারণে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া, চুক্তির বাইরে গিয়ে উত্তোলন, রফতানি বাড়ানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। এর পরও মস্কো-রিয়াদের চেষ্টায় একের পর এক জ্বালানি তেলের উত্তোলন হ্রাস-বৃদ্ধির সময়সীমা ও পরিমাণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
ফলে জ্বালানি পণ্যটির দরপতন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় জোটটি উত্তোলন হ্রাস-বৃদ্ধি করলেও আদতে সেটির কোনো সুফল আসেনি। কারণ বাজার চাঙ্গা করার একমাত্র উপায় হিসেবে জোটটি বারবার উত্তোলন ও সরবরাহ কমিয়ে এসেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশের কারণে এ চেষ্টা পুরো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে জ্বালানি তেলের বাজার ততট চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ পায়নি। এরই মধ্যে এসেছে করোনা মহামারীর আঘাত। ফলে জ্বালানি তেলের দাম নজিরবিহীন কমে যায়, যা আগামীতে আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে এখনই যে হাল ছেড়ে দিতে চাচ্ছে না জোটটি, সেটি উঠে এসেছে ওপেক জোটের শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যে।
গত বৃহস্পতিবার এনার্জি ইন্টেলিজেন্স ফোরামে ওপেক মহাসচিব জানান, আর কোনোভাবে যেন জ্বালানি তেলের বাজারে এমন বড় ধস না নামে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। ফোরামে ওপেক মহাসচিব বলেন, আমরা যে দরপতন প্রত্যক্ষ করেছি ভবিষ্যতে এমন দরপতন যেন আর ফিরে না আসে ওপেক ও নন-ওপেক সদস্যরা সেটির ব্যবস্থা করবে। আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে চাই যে এবারের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জোটের জানা সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এমন আশ্বাসের পরের দিন গতকালই আবারো কমেছে জ্বালানি তেলের দাম। মূলত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি তেলের বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। গতকাল ব্রেন্ট ক্রুডের ডিসেম্বর সরবরাহ মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৩৮ সেন্ট কমেছে। এদিন প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দশমিক ৯ শতাংশ কমে ৪২ ডলার ৭৮ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট বা ডব্লিউটিআই নভেম্বরে সরবরাহ মূল্য কমেছে ৩৫ সেন্ট বা দশমিক ৯ শতাংশ। এ সময় প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে ৪০ ডলার ৬১ সেন্টে। দুটো বেঞ্চমার্কই এদিন আগের দিনের তুলনায় কমেছে। তবে সপ্তাহের শুরুর তুলনায় এটি অপরিবর্তিত রয়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংক অস্ট্রেলিয়ার পণ্যবিষয়ক গবেষণা বিভাগের প্রধান ল্যাকলান শ বলেন, করোনা মহামারীর রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তবে নতুন করে আবার ইউরোপজুড়ে এটি বাড়তে শুরু করেছে। একইভাবে বাড়ছে উত্তর আমেরিকায়ও। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল সেটি আপাতত চাপে পড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে লিবিয়া সরবরাহের পরিমাণও বাড়ছে। এটি এমন একটি উৎস, যেটি জ্বালানি তেলের বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে কিছুটা হলেও ভারসাম্য আনতে সক্ষম।