ক্যাসিনো কাণ্ড : ২০ মামলায় চার্জশিট ১২টি শিগগিরই

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গত বছরের ১৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে শুরু হয়েছিল ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। প্রথমেই রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়াংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ওই ক্লাবের হোতা যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ৬ই অক্টোবর কুমিল্লা থেকে ক্যাসিনো ডন মাফিয়া ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে. গ্রেপ্তার করা হয়। এসব ঘটনায় দায়ের করা হয় ৩২টি মামলা। এর মধ্যে গত এক বছরে ২০টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১৩টি মামলা ও পুলিশের পক্ষ থেকে ৭টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়।
অভিযান প্রথমে ক্যাসিনো কারবারিদের বিরুদ্ধে শুরু হলেও তা শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে প্রভাবশালী ঠিকাদার, কাউন্সিলর, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে। বন্ধ হয়ে যায় মতিঝিল ও ধানমন্ডি ক্লাবপাড়াগুলো। এরপর থেকে দীর্ঘদিন অভিযান থমকে গেছে। এরমধ্যে মাঠে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে পলাতক ক্যাসিনো কারবারিরা। কেউ কেউ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে আছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ক্যাসিনো অভিযানের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ১৩টি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ঝড়োগতিতে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। এ সময় প্রায় ৪৯টি অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৩২টি র‌্যাব এবং ১৭টি পুলিশ অভিযান চালায়। গ্রেপ্তার হয়েছে ২৭৫ জন। এরমধ্যে ২২৩ জন ঢাকায়। আর বাকি ৫৩ জন ঢাকার বাইরের অন্য জেলাগুলোতে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২ জন, ঢাকার ৩ কাউন্সিলর, যুবলীগের ৬ জন ও কৃষকলীগের ১ জন। সরকার ও দুদক কর্তৃক দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আছে ৩৪ ব্যক্তির বিরুদ্ধে। প্রায় ১১টি ক্যাসিনো ও ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব।
সূত্র জানায়, ওইসব অভিযানে ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নগদ, ১৬৬ কোটি টাকার এফডিআর, ১৩৩টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ৮ কেজি সোনা, ২৭টি অস্ত্র এবং সাড়ে ৪ হাজার বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। অভিযান শুরু হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যেই প্রভাবশালী ২৩ ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০ ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। এই ক্যাসিনো অভিযানে গ্রেপ্তার হন টেন্ডার কিং এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম। গ্রেপ্তার হন মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক মো. লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনোর প্রধান সমন্বয়কারী সেলিম প্রধান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা ময়নুল হক ওরফে মনজু।
সূত্র জানায়, এসব ঘটনায় দায়ের করা ৩২টি মামলার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি মামলার তদন্ত করে র‌্যাব। এর মধ্যে ১৩টি মামলার চার্জশিট আদালতে প্রদান করা হয়েছে। একটি মামলা তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বাকি ১৮টি মামলা তদন্ত করে পুলিশ। এর মধ্যে ৭টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে তারা। এর মধ্যে গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের পাঁচটি মামলার মধ্যে চারটির চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি জানিয়েছে, এনু-রুপনের কাছ থেকে জমিসহ ২০টি বাড়ি, ১২০টি ফ্ল্যাট, ২৫ কাঠা জমি ছাড়াও ৯১টি ব্যাংক একাউন্টে ১৯ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। আরো একটি মামলায় শিগগিরই চার্জশিট দেয়া হবে বলে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, যে ২০টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে সেসব মামলা টাকা পাচার ও অর্থ আত্মসাতের। এ কারণে মামলাগুলো চার্জশিট দিতে দেরি হচ্ছে। যারা টাকা পাচার করেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স। বিদেশে তারা কোথায় এবং কীভাবে টাকা পাচার করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এসব বিষয়ের তদন্ত শেষ হলে দ্রুত মামলাগুলোর চার্জশিট দেয়া হবে।