মোংলা বন্দরে আসছে না সিরামিকের কাঁচামাল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ খুলনা বিভাগসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলেও কাঁচামাল সংকটে নির্মাণকাজের অন্যতম উপাদান সিরামিক কারখানার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে খুলনা অঞ্চলে সিরামিকের দামও বেশি পড়ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সিরামিকের কাঁচামালের ওপর থেকে ল্যান্ডিং চার্জ মওকুফ বা কম করা হলে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আরো বেশি কাঁচামাল আমদানি করা সম্ভব হবে। এতে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা আরো বেশি সচল হবে। দেশের দুই প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের দ্বৈত নীতির কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। সেজন্য তারা চট্টগ্রাম বন্দরের ন্যায় মোংলা বন্দরের অবতরণ ফি (ল্যান্ডিং চার্জ) মওকুফের দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ ও বাগেরহাটে দুটি সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। তাদের বিদেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামাল মোংলা বন্দরের পরিবর্তে খালাস করতে হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। সেখান থেকে আবার সড়কপথে কাঁচামাল আনতে হয় কারখানায়, যা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। কিন্তু মোংলা বন্দরে যদি কোনো ল্যান্ডিং চার্জ না নেয়া হতো, তাহলে এই বন্দরের মাধ্যমেই সব কাঁচামাল আনা সম্ভব ছিল। এতে মোংলা বন্দরের আরো বেশি জাহাজ আসত। আর এতে বন্দরের গতিশীলতা আরো বৃদ্ধি পেত।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুরে অবস্থিত মেসার্স তুষার সিরামিক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান বলেন, মোংলা বন্দরে ল্যান্ডিং চার্জের কারণে সিরামিক কাঁচামাল আমদানিতে বাড়তি খরচ হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবার মোংলা বন্দর দিয়ে সিরামিকের কাঁচামাল আমদানিতে আমার ৮৭ লাখ টাকা বাড়তি ব্যয় হয়েছিল। ওই সময় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করা হলে এ টাকা খরচ হতো না। ল্যান্ডিং চার্জ নীতির কারণে মোংলা বন্দর দিয়ে এ বাড়তি ব্যয় হয়।
ওই ঘটনার পরই মোংলা বন্দরের ল্যান্ডিং চার্জ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন। সচিব আবেদন হাতে পেয়ে মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যানের কাছে ফোন করে বিষয়টি জানেন এবং দুর্নীতির বিষয়ে দেখতে বলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এক দেশে দুই নীতি বহাল থাকা নীতিবিরুদ্ধ কাজ বলে অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, তার কারখানায় প্রতিদিন ৪০০ টন সিরামিক কাঁচামাল দরকার হয়। এ হিসাবে মাসে ১২ হাজার টন কাঁচামাল লাগে, যা আমদানি করতে হয়। সবমিলিয়ে মোংলা বন্দরের ল্যান্ডিং চার্জ প্রত্যাহার হলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। আর বন্দরে জাহাজ আসার হারও বাড়বে।
জানা গেছে, মোংলা বন্দরে সিরামিকের কাঁচামালের জন্য টনপ্রতি নেয়া হয় ২৫০ টাকা। এর বাইরে রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। সব মিলিয়ে মোংলা বন্দরে এক টন পণ্য এলে একজন আমদানিকারককে গুনতে হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো ধরনের ল্যান্ডিং চার্জ দিতে হয় না।
খুলনার স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ম্যাক্স শিপিংয়ের স্বত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম বলেন, মোংলা বন্দরে ল্যান্ডিং চার্জ মওকুফ করা হলে এখানে জাহাজের আগমন আরো বেশি হতো। বার্জ মালিকসহ এ কাজের সঙ্গে জড়িতরা উপকৃত হতেন। খুলনা অঞ্চলের ঘাটগুলো থেকে আরো বেশি রাজস্ব আদায় হতো। রেলওয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য পরিবহন হতো এবং রেলওয়েও লাভবান হতো। কিন্তু জাহাজ কম আসায় তা হচ্ছে না। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে ল্যান্ডিং চার্জ না থাকায় বেশির ভাগ আমদানিকারক মোংলার পরিবর্তে ওই বন্দর ব্যবহার করে সিরামিকের কাঁচামাল আমদানি করেন।খুলনা চেম্বারের সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, এ বিষয়ে যদি কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
অন্যদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলনে, মোংলা বন্দর সৃষ্টির পর থেকেই ল্যান্ডিং চার্জ চলমান আছে। এই আয় থেকে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পেনশন দেয়া হয়।
সিদ্দিকুর রহমান আরো বলনে, চট্টগ্রাম বন্দররে সঙ্গে মোংলা বন্দরের তুলনা করলে হবে না। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি মাসে ৩০০টি জাহাজ আসে। এর বিপরীতে মোংলা বন্দরে আসে মাত্র ৬০ থেকে ৭০টি।