সরকারের একগুঁয়েমির মাশুল দিচ্ছেন জনগণ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এ মহামারী মোকাবেলায় একটা লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি করেছে। কারও কোনো পরামর্শ কর্ণপাত না করে এককভাবে কাজ করেছে। অদক্ষতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা সর্বোপরি সরকারের একগুঁয়েমির কারণে আজ সাধারণ মানুষ জীবনের বিনিময়ে এর মাশুল দিচ্ছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি-লুটপাটে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এ খাতে দুর্নীতির বরপুত্রদের রক্ষায় শাহেদের মতো চুনোপুঁটিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি ‘আইওয়াশ’। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় ভাড়া বাসায় এ সাক্ষাৎকার দেন ফখরুল। এ সময় তিনি করোনা পরিস্থিতি ও সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ, নিজ দলের কর্মপরিকল্পনা, দল পুনর্গঠন, চেয়ারপারসনের চিকিৎসা, স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা, জোটের রাজনীতিতে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগসহ দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেন।
করোনা মোকাবেলায় অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকার কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে- এমন দাবি করে অর্থনীতির সাবেক এ শিক্ষক বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের বাস্তবমুখী কোনো পরিকল্পনা নেই। করোনার মধ্যে দেশে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ অসহায়ভাবে জীবন পার করছেন। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, সরকার চায় না উনার উন্নত চিকিৎসা হোক। সেই কারণে মুক্তির সঙ্গে বিদেশ যেতে পারবে না বলে শর্ত আরোপ করা হয়েছে। জোট থেকে জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৯৪৮ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা কলেজে অর্থনীতিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ১৯৮৯ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় হন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের প্রথমে কৃষি ও পরে বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দলের পঞ্চম কাউন্সিলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এবং ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর মহাসচিব নির্বাচিত হন। দলের এ দুঃসময়ে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা মোকাবেলায় সরকার শুরু থেকেই অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। শুরুতে বিদেশ ফেরতদের যথাযথ কোয়ারেন্টিন (সঙ্গত্যাগ) করতে ব্যর্থ হওয়া, লকডাউনের (অবরুদ্ধ অবস্থা) পরিবর্তে সাধারণ ছুটি ঘোষণা, করোনার ঊর্ধ্বগতির সময় গার্মেন্ট খুলে দেয়া, আবার তাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে নাটকীয়তা দেখা যায়। শুরুতে শুধু একটি কেন্দ্রে পরীক্ষা সীমিত রাখা, ঈদে ঢাকা ছাড়ার প্রশ্নে নানাবিদ সিদ্ধান্ত, লকডাউন বাস্তবায়নে সিদ্ধান্তহীনতা, সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালাতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যর্থতা এবং সবশেষ জোন চিহ্নিতকরণের নামে ‘লাল-সবুজ-হলুদ’ নাটক ঘোষণা দেশব্যাপী করোনা বিস্তারে সহায়তা এবং করোনা সংকট মোকাবেলা জটিল করেছে।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় সব দল ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জাতীয় ট্যাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেয়া হলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। দলীয় কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সেই কমিটির সুপারিশও সরকার আমলে নিচ্ছে না। অথচ শুরু থেকে এসব কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। কারণ, করোনা মোকাবেলায় আমরা যথেষ্ট সময় পেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার সেটাকে কাজে লাগাতে পারেনি। ফখরুল বলেন, সরকারের অদক্ষতায় শুধু সংক্রমণ বাড়েনি বিশ্বে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
সরকারকে ব্যর্থ বলছেন কিন্তু বিরোধী দল হিসেবে আপনারা কি সঠিক দায়িত্ব পালন করেছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিরোধী দলের মূল কাজ হচ্ছে সরকারের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরে পরামর্শ দেয়া। করোনা পরিস্থিতিতে কি করণীয় আমরা প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছি। এসব প্রস্তাব তো আমাদের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এগুলো বাস্তবায়ন করবে সরকার। এছাড়া এ মহামারীতে আমাদের যতটুকু দায়িত্ব রয়েছে তা পালন করার চেষ্টা করছি। আমরা প্রায় দুই কোটি অসহায় মানুষকে ত্রাণ দিয়েছি।
স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি এবং এর বিরুদ্ধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা একদিনে তৈরি হয়নি। এর গোড়াতেই গলদ রয়েছে। চিকিৎসকসহ যাদেরই এ খাতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তারা সরকারের তল্পিবাহক। নিয়োগের সময়ই তারা মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে এখানে আসেন। এরপর সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদেই চলে দুর্নীতি। লুটপাটের বিষয়টি যখন গণমাধ্যমে আসে তখন সাহেদ, সাবরীনার মতো চুনোপুঁটির গ্রেফতারের নাটক চলে। স্বাস্থ্য খাতের রাঘববোয়ালদের রক্ষা করতেই এসব চুনোপুঁটিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এতটাই ভেঙে পড়া এবং দুর্নীতির পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিভাবে এখনও স্বপদে রয়েছেন। তার তো নিজের আত্মসম্মানবোধ রক্ষার জন্য হলেও পদত্যাগ করা উচিত। সচিবের চাকরি যাওয়া উচিত। ডিজি পদত্যাগ করেছেন। উনাকে বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। এখন দু-এক ব্যক্তিকে সরালে এ খাতে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে না। শুধু স্বাস্থ্য খাত নয়, রাষ্ট্রের প্রতিটি খাতই আজ ভঙ্গুর। দুর্নীতি, লুটপাট আর অব্যবস্থাপনায় সব সেক্টরই ভেঙে পড়েছে।
করোনা মোকাবেলায় সরকারের আর কি করা উচিত এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা এখন আর সরকারকে কোনো পরামর্শ দিতে চাই না। কারণ সরকারকে পরামর্শ দিলে তারা এটাকে বিকৃতি করে ভিন্নভাবে প্রচার করে। তারপরও জনগণের কথা চিন্তা করে আমরা চুপ থাকতে পারি না। করোনা মোকাবেলায় সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ায়। নিু আয়ের মানুষ বিশেষ করে বস্তিবাসীদের যেন বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা করানো হয়। করোনা মোকাবেলায় রাজনৈতিক দল, এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যেত। এটা জরুরি দরকার।
জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আসলে আওয়ামী লীগের মাইন্ডসেটআপ হল, ‘আমিই সব আর কেউ নেই।’ তাদের এ মনোভাব সেই স্বাধীনতার সময় থেকেই। ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে সময় আওয়ামী লীগ তা করেনি। আসলে আওয়ামী লীগ দেশের বিরোধী দলকে সহ্যই করতে পারে না। ঐক্য দূরের কথা উল্টো বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার কাজে তারা ব্যস্ত। সরকারের এসব নিপীড়নমূলক কাজে প্রতিবেশী একটি দেশ তাদের সহায়তা করছে। দেশের স্বার্থ নয় তাদের কাছে মুখ্য হচ্ছে কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব প্রতিষ্ঠানকে তারা নিজেদের মতো করে নিয়েছে। ফলে দেশ পরিচালনায় কারও পরামর্শের প্রয়োজন মনে করে না। এ কারণেই তারা জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে ততটা আগ্রহী নয়। কিন্তু আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে চাই এবং জনগণের জীবিকাকে আরও বিকশিত করতে চাই। এজন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য।
করোনার ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটে, এ থেকে উত্তরণে কি করা প্রয়োজন এমন প্রশ্নের উত্তরে ফখরুল বলেন, করোনায় দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতিই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। করোনার কারণে শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমে গেছে, আমদানি-রফতানি নেই বললেই চলে। অনেকে চাকরি হারাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে অর্থনীতি সচল রাখার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থনীতি সচল রাখতে আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন দেখিনি। সরকার স্বাভাবিক সময়ের মতো একটা বাজেট দিয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষ কোনো চিন্তার প্রতিফলন সেখানে নেই। তারা মানুষের জীবিকার কথা চিন্তা না করে বড় বড় মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ করেছে। কিন্তু এ মুহূর্তে মেগা প্রকল্পের দিকে নজর না দিয়ে অর্থনীতি সচলের দিকেই সরকারের গুরুত্ব দেয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেটার সুবিধাভোগী কারা। দেশের হাজার হাজার মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য কিছুই করছে না। দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এখনি বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়াতে হবে। এমন সব উদ্যোগ নিতে হবে যাতে সামষ্টিক অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে। করোনাপরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ হলে দেশের অর্থনীতিতে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। যা থেকে উত্তরণ আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ততটা ভালো নয়। কিন্তু করোনার কারণে যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বের হাসপাতালগুলোতে এ মুহূর্তে যথাযথ চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। বর্তমানে যে চিকিৎসা অব্যাহত আছে তা আরও ভালোভাবে করার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তার উন্নত চিকিৎসা শুরু হবে। তিনি দাবি করেন, সরকার শুরু থেকেই তার চিকিৎসার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়নি। কারাগারে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় ছিলেন তিনি। মুক্তির পর আমাদের প্রত্যাশা ছিল এবার তার উন্নত চিকিৎসা করানো যাবে। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় জেনেও সরকার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত আরওপ করেছে। আসলে সরকার চায় না বিএনপি চেয়ারপারসনের উন্নত চিকিৎসা হোক। তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো বা বিদেশ নেয়ার বিষয়টি চেয়ারপারসনের পরিবার দেখভাল করছে। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
জামায়াত ছাড়া এবং ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দূরত্ব প্রসঙ্গে বিএনপির এ নীতিনির্ধারক বলেন, শুধু জামায়াত নয়, পুরো রাজনীতির বিষয়ে আমরা আলোচনা শুরু করেছি। জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মতামত নেব। আলোচনাটা হয়তো আরও বিস্তৃত করা হবে। এরপর দলের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পর ২০ দলীয় জোটে কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আন্দালিব রহমান পার্থ জোট থেকে বেরিয়ে যান। এরপর আর কোনো সমস্যা নেই। করোনার কারণে হয়তো দেখা হয় না কিন্তু সবার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে কাদের সিদ্দিকী বেরিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো সমস্যা নেই। ফ্রন্ট ও জোটের ঐক্য আরও অটুট হয়েছে। তাছাড়া জোটের বিষয়টি এখন আমাদের কাছে মুখ্য নয়, আমরা এখন দল নিয়েই বেশি ভাবছি।
চেয়ারপারসন অসুস্থ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে- এমন পরিস্থিতিতে দল চালাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে দলীয় কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমেই আমরা দল চালাচ্ছি। সাংগঠনিক তৎপরতা অতীতের চেয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আরও বেশি সক্রিয় হচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরামর্শ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। কোনো সিদ্ধান্তই এককভাবে নেয়া হয় না।
করোনাকালীন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন বলতে গেলে সবকিছুই স্থবির। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও এর প্রভাব পড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যতটুকু সম্ভব কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সংক্রমণের আশঙ্কায় আমরা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখেছি। স্বাভাবিকভাবেই পুনর্গঠনে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এটা কাটিয়ে কিভাবে দলকে গতিশীল করা যায় সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আমরা সিনিয়ররা এ ব্যাপারে ভার্চুয়াল মাধ্যমে তৃণমূল নেতাদের মতামত নিচ্ছি। এতে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। দল পুনর্গঠনের প্রাথমিক কাজ আমরা সেরে রাখছি। যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পুনর্গঠন শেষ করতে পারি।
দলের ভেতর কোন্দল প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দল ইউনাইটেড আছে। বিএনপির মতো বড় একটি দলে নেতাদের নানা রকম চাওয়া-পাওয়া থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এসবকে আমরা কোন্দল বলতে চাই না। এটা এক প্রকার নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা বলা যায়। আমাদের দলে ভাঙন সৃষ্টি করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, গত ১ যুগে এত নির্যাতনের পরও আমাদের দল থেকে বেরিয়ে কেউ আওয়ামী লীগে যোগ দেননি। এত বৈরিতার মধ্যেও যে আমরা ঠিক আছি বা রাজনীতি করছি এটাই আমাদের সফলতা।
করোনা পরবর্তী রাজনীতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মনে করি করোনা পরবর্তী রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন আসবে। করোনার আগে কোনো সভা-সমাবেশে যেভাবে লোকের উপস্থিতি দেখা যেত ভবিষ্যতে হয়তো সেটা দেখা নাও যেতে পারে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটা প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক হয়ে উঠবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি কেমন হবে তা নিয়ে আমরা এখনি আলোচনা শুরু করেছি। করোনাপরবর্তী রাজনীতি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে সেই প্রস্তুতিও চলছে। দলকে কিভাবে তারুণ্যনির্ভর ও জ্ঞানভিত্তিক করে গড়ে তোলা যায় সেই পরামর্শও নেয়া হচ্ছে।