স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিতর্কিত ডিজিকে অপসারণের দাবি চিকিৎসক সংগঠনের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদের অপসারণ দাবি করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টর’স সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেস্পন্সিবিলিটি (এফডিএসআর)। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে সংগঠনটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন ও মহাসচিব ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই দাবি জানানো হয়। ওই চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও। করোনাভাইরাস মহামারিতে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে নানাবিধ পরামর্শ ও পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আলোচনায় আসা এফডিএসআর-এর চিঠিতে বলা হয়েছে, মহাপরিচালক ও তার অনুগ্রহভাজনদের কর্মকাণ্ডে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনিয়ম, লুটপাট, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির এক আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংকট শুরুর দিক থেকে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষা ও অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে ব্যার্থতা, পরীক্ষার কিট ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই ও মেডিকেল যন্ত্রাংশ সরবরাহে ব্যার্থতা, নিম্নমানের মাস্ক ও পিপিই সরবরাহ, বিভিন্ন স্বাস্থ্য সামগ্রী ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নিদারুণ সমন্বয়হীনতার কারণে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আইনগতভাবে দায়বদ্ধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নানা সমালোচনায় জর্জরিত।
চিকিৎসকদের মানহীন ও নকল এন৯৫ মাস্ক ও স্বাস্থ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ এনেছে বেশ কয়েকটি চিকিৎসক সংগঠন। এসব নিয়ে সোচ্চার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পেছনেও ডিজির হাত দেখছেন ডাক্তাররা। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সামগ্রী ক্রয়ে বেশুমার দুর্নীতিতে জড়িত চক্রগুলোকে প্রশ্রয় ও লালনপালন সহ এসবে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে অধিদপ্তরের ডিজির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সংকটের শুরু থেকে দেশজুড়ে পর্যাপ্ত পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গড়িমশি ও তথ্য ধামাচাপার প্রবণতার ক্ষুদ্ধ করেছে অনেককে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণেই দেশে করোনাভাইরাস এতটা বাজেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
এফডিএসআর-এর চিঠিতেও এসব অভিযোগের প্রতিফলন রয়েছে। এতে বলা হয়, “মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ কভিড-১৯ সংক্রমণ প্রাদুর্ভাবের প্রাক্কালে নকল মানহীন এন৯৫ মাস্ক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পাঠানোর সঙ্গে সরাসারি জড়িত ছিলেন। শুরু থেকে এই মহাপরিচালক বলে এসেছেন যে, তার দফতর কভিড মোকাবেলায় প্রস্তুত। অথচ চিকিৎসকদের শুরুতে তারা পিপিই দিতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, তাদের প্রস্তুতিহীনতা পদে পদে সরকারকে বিব্রত করেছে।”
‘আবুল কালাম আজাদ শুরুতে বলেছেন, বাংলাদেশের আর্দ্রতার কারণে কভিড বেশি দিন স্থায়ী হবে না। তারপর বলেছেন, দিনে ৬৫ হাজার রোগী হবে। তারপর আবার বলেছেন, এই রোগ দেশে তিনবছর বা তার বেশিও থাকতে পারে। এভাবে তিনি দেশের মানুষকে ভুল বার্তা দিয়ে বারবার বিভ্রান্ত করেছেন।’ ‘চূড়ান্ত অনিয়ম করে তিনি ভুঁইফোড়, অভিজ্ঞতাহীন জেকেজি হেলথকেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কভিড রোগীর ভাইরাল স্যাম্পল সংগ্রহের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। জেকেজি অসাধু তৎপরতা চালিয়ে রোগীদের স্যাম্পল ফেলে দিয়ে জাল রিপোর্ট দিয়েছে ও বেআইনিভাবে টাকা নিয়েছে। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে নিরীহ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের পকেট মেরেছে। এই মহাপরিচালক তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পত্রিকায় বলেছেন যে, জেকেজিকে সতর্ক করা হয়েছে। অথচ নিয়মানুযায়ী তাদের কাজ স্থগিত করে, তদন্ত ও মামলা করার কথা।’ এসব উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্লজ্জ, দুর্নীতিবাজ এই মহাপরিচালককে অপসারণ করে তার দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে তার ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলা হয়েছে চিঠিতে। চিঠিতে অবিলম্বে এই মহাপরিচালককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার দুর্নীতির তদন্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।