পানি শুকিয়ে ঝাঁপা বাঁওড় এখন মরা খাল আশপাশের জমিতে ধানের ব্যাপক ফলন

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রাজগঞ্জ ঝাঁপা বাঁওড়ের পানি চলতি শুষ্ক মৌসুমে অস্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে গেছে। দীর্ঘ এ বিশাল জলরাশিটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বাঁওড়ে নেই হৃদয় দোলানো সেই পানির ঢেউ। নেই দুপুরবেলা মধ্য বয়সীদের গোসলের আড্ডা আর শিশুদের সাঁতার প্রতিযোগিতা। মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব ও ঐতিহ্যগাঁথা দেশের প্রথম স¦াধীন জেলা যশোর শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের চারপাশ দিয়ে অবস্থিত এই সুবিশাল জলরাশিটি। এটি দেশব্যাপী অনেক পরিচিত। এর রয়েছে যেমন স্বচ্ছ মিঠা পানি, তেমনি বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ। যার অনেক সুনাম রয়েছে। এখানে রয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে দুটি ভাসমান ব্রিজ। সুবিশাল এই জলরাশিটি বলা চলে এই অঞ্চলের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু এবারের এই শুষ্ক মৌসুমে এর পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় মনে হবে না এটি সেই সুবিশাল জলরাশি। মনে হয় এটি কোন মরা খাল। কোথাও কোথাও দেখলে প্রথমে মনে হবে বিশাল আকৃতির এক একটি চর পড়েছে। তার পাশে একের পর এক ধান ক্ষেত। সেখানে স্থানীয়রা গরু-ছাগল চরাচ্ছেন। কোথাও কোমর সমান আবার কোথাও বা হাঁটু পানিতে নেমে গেছে এই বাঁওড়। প্রতি বর্ষা মৌসুমে আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন বিলের পানি এই জলরাশিতে এসে পড়ে। সেই পানি যেমন মাছ চাষের প্রধান নিয়মক, তেমনি বোরো মৌসুমে এই বাঁওড়ের চারপাশের হাজার হাজার বিঘা জমির সেচ নির্ভর এই পানি। কিন্তু গত বর্ষা মৌসুমে পানি বেশি না হওয়ায় এখানে পানি কম জমা হয়। প্রতি বছরের মত এবারও বর্ষার মৌসুমে জমা হওয়া সেই পানি পাম্পের মাধ্যমে তুলে বোরো জমিতে সেচ দেয়া হয়। কিন্তু এবারের এই খরা মৌসুমে অস্বাভাবিক হারে শুকিয়ে গেছে ঝাঁপা বাঁওড়ের পানি। পানি এতটাই কমে গেছে দেখে মনে হবে এটি কোন বিশাল জলারাশি নয়, কোন মরা খাল। এরকম অবস্থা আগে কোনদিন দেখেননি বলে জানান বাঁওড় পাড়ের বাসিন্দারা। আর বাঁওড়ের ঝাঁপা গ্রামের মালিকানাধীন জমিতে বিশেষ করে ২০০০ সালের পর থেকে যে জমিতে কোন ফসল হয়নি সেই জমিতে ব্যাপকভাবে ফলেছে স্বপ্নের বোরো ধান। বিশেষ করে বাঁওড়ের ইজারাদের তাবেদারির কারণে জমির মালিক হয়েও তারা ওই স্থানের পানি ছুঁয়ে দেখতে পারেননি। পানি এতটায় কমে গেছে যে সেখানে বোরো আবাদ করতে না পারায় অনেক জমি পড়ে আছে। সেসব জমিতে এবার পাট বোনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা। এদিকে দীর্ঘদিন পর জমিতে সোনার বোরো ধান ফলাতে পেরে খুব খুশি জমির মালিকরা। তারা জানান, অন্য জমির চেয়ে এই জমিতে ধান চাষে বিঘা প্রতি অনেক খরচ কম হয়েছে। যেখানে অন্য জমিতে বিঘা প্রতি সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা, সেখানে এই জমিতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। তবে ফলন অনেক বেশি হলেও দুশ্চিন্তার শেষ নেই কৃষকের। কারণ আবহাওয়া পরিস্থিতি এই মুহূর্তে অনেক খারাপ । গত কয়েক দিন ধরে এই অঞ্চলে অব্যাহত বৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে ধান কেটেও বিপাকে পড়েছেন। একটু ভারি বৃষ্টি হলেই ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে শেষ বিকেলে ঝাঁপা বাওড়টি আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে অনেক দর্শনীয় হয়ে উঠেছে। করোনা সতকর্তার মধ্যেও সুযোগ বুঝে স্থানীয়রা বাঁওড়ের ধারে বসে এই মুহূর্তের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। বাঁওড়ের বুকে জন্ম নেয়া ঘাস কেটে এবং সারাদিন গরু-ছাগল চরিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। কথা হয় ঝাঁপা দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা ৮০ বছরের বৃদ্ধ দেলবার আলীর সাথে। তিনি জানান, জন্মের পর থেকে বাঁওড়ের এমন অবস্থা দেখিনি। বাঁওড়ে তার ১০ বিঘা জমি আছে। বন্যার কারণে ২০০০ সালের পর থেকে জমিতে তিনি কখনো লাঙ্গল নিয়ে যেতে পারেননি। এবার পানি কমে যাওয়ায় জমিতে বোরো ধানের আবাদ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ধানের ফলন নিয়েও তিনি খুব খুশি।