উত্তোলন হ্রাস চুক্তি থেকে বের হয়ে আসতে পারে রাশিয়া

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাজার নিয়ন্ত্রণে কয়েক বছর ধরে উত্তোলন ও সরবরাহ কমিয়ে দিলেও কার্যত লক্ষ্যপূরণে প্রায় ব্যর্থ হয়েছে ওপেক প্লাস জোট। চুক্তি অনুযায়ী, জোটভুক্ত দেশগুলো উত্তোলন হ্রাস করলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের উত্তোলন বৃদ্ধির কারণে বাজারের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি জোটটি। উল্টো বাজার হিস্যা হারাচ্ছে বৃহৎ উৎপাদক দেশগুলো। সে কারণে রাশিয়া আগামী বছর জোটের সঙ্গে করা উত্তোলন হ্রাস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ ও রয়টার্স।
জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ঠেকাতে ২০১৬ সালে রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক ও ওপেক বহির্ভূত দেশ নিয়ে গঠিত হয় ওপেক প্লাস জোট। যার নেতৃত্বে যথাক্রমে সৌদি আরব ও রাশিয়া। বাজারে জ্বালানি পণ্যটির সরবরাহ কমিয়ে দাম বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ২০১৭ সাল থেকে উত্তোলন হ্রাস চুক্তি কার্যকর করে আসছে জোটটি। চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন ১২ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনছে জোটের সদস্য দেশগুলো। এতেও বাজার চাঙ্গা না হওয়ায় আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দৈনিক উত্তোলন অতিরিক্ত আরো পাঁচ লাখ টন কমিয়ে আনতে যাচ্ছে জোটটি। অর্থাৎ আগামী বছর থেকে দৈনিক উত্তোলন ১৭ লাখ ব্যারেল কমাবে জোটটি। যার মধ্যে রাশিয়াকে একাই কমাতে হবে দৈনিক তিন লাখ ব্যারেল। উত্তোলন হ্রাস চুক্তি মার্চের পর আরো বৃদ্ধির বিষয়েও জোটের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।
কিন্তু উত্তোলন হ্রাসের এ কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওপেক প্লাসের প্রভাবশালী দেশ ও কার্যত নেতা রাশিয়া। এমনকি উত্তোলন হ্রাসের চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়ারও আভাস দিয়েছে দেশটি।
রাশিয়ার জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক সম্প্রতি ওপেক প্লাস জোটের টিকে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। দেশটির একটি টিভি চ্যানেলে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, উত্তোলন হ্রাস স্থায়ী কোনো বিষয় নয়। আমাদের ধীরে ধীরে এটি থেকে বের হতে হবে। কারণ এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ উত্তোলন কমিয়ে আনা হয়েছে সেটি উদ্বেগের। জ্বালানি তেলের বাজারে রাশিয়ার হিস্যা বাড়ানো এবং দেশের কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যৎ প্রকল্প সম্প্রসারণের জন্য এ চুক্তি থেকে আগামী বছর নাগাদ বের হয়ে যাওয়ার বিষয় বিবেচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাজার চাঙ্গা করার বাসনা নিয়ে ২০১৬ সালে চুক্তি এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দিলেও রাশিয়া যে এখন এ চুক্তি আর মানতে চাচ্ছে না, তার প্রমাণ চলতি বছর দেশটির উত্তোলন প্রবৃদ্ধি। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশটি জোটের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী কোটার চেয়ে বেশি জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে। চলতি মাসেও এ ধারা অব্যাহত রেখেছে। এখন পর্যন্ত দৈনিক ১ কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে, যা দেশটির জন্য নির্ধারিত কোটার তুলনায় ৬২ হাজার ব্যারেল বেশি। এছাড়া আগামী বছর দৈনিক উত্তোলন ১ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ব্যারেলের মধ্যে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক।
এদিকে কোটার অতিরিক্ত উত্তোলন করার পরও ওপেক প্লাস জোটের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে দেশেও স্বস্তিতে নেই রাশিয়া। এরই মধ্যে দেশটির খাতসংশ্লিষ্টরা এ চুক্তি নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছেন। তারা মনে করছেন, এ চুক্তি থেকে রাশিয়ার কোনো লাভ হচ্ছে না। উপরন্তু বাজারের হিস্যা কমে যাচ্ছে।
রাশিয়ার শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান রোজনেফট পিজেএসসি এ চুক্তির সমালোচনা করে বলছে, ওপেক প্লাস জোটের এ চুক্তি কেবল ওপেকের কার্যত নেতা সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিল করবে।