যশোরে দুই প্রতারক আটক, ১শটি ব্ল্যাঙ্ক চেক ও ৩ শতাধিক ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প উদ্ধার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে যশোরের ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার মনিরামপুরে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে নেওয়া ব্যাংকের ১শটি ব্ল্যাঙ্ক চেক, ৩ শতাধিক ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প ও পুুলিশে নিয়োগ পরীক্ষার ১৭টিসহ বিভিন্ন দফতরের নিয়োগ পরীক্ষার প্রায় দেড়শ প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আটকরা হলেন, মনিরামপুর উপজেলার হাকোবা গ্রামের সন্তোষ কুশারীর ছেলে পলাশ কুশারী (৪৩) ও দুর্গাপুর গ্রামের মৃত সামছুল মোড়লের ছেলে বুলবুল আহমেদ (৪৬)। এই চক্রের আরও ৩ সদস্যকে আটক করতে পারেনি ডিবি পুলিশ। এরা হলেন, সদর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের মীর হোসেনের ছেলে সুমন হোসেন, বাবলাতলা এলাকার বজলু ওরফে দাউদ ও অভয়নগরের শাহীন।
ডিবি পুলিশের এসআই মো. মফিজুল ইসলাম জানান, ওই চক্রটি কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর গ্রামের শ্যামল দাসের ছেলে সৌরভ কুমার দাসকে পুলিশে চাকরি পাইয়ের দেওয়ার নামে প্রতারণা করে। এরই সূত্র ধরে চক্রটির সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি বলেন, গত ৮,১০ ও ১১ মার্চ যশোর পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত কনস্টেবল পদে নিয়োগের শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১২ মার্চ তিনি শারীরিক পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে পুলিশ লাইন্স থেকে বের হওয়ার পর শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া ফাজিল মাদ্রাসার সামনে প্রতারক চক্রের সদস্য পলাশ কুশারীর সাথে তার দেখা হয়। এ সময় সৌরভ কুমার দাসের শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের রেজাল্ট দেখে তাকে কনস্টেবল পদে চাকরির শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে তার প্রবেশপত্রের ফটোকপি নেন পলাশ কুশারী। সেই সাথে পলাশ কুশারী তাকে নিজ মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে তার সাথে পরে দেখা করতে বলেন। ১৫ মার্চ দুপুরে পলাশ কুশারীর বাড়িতে যান সৌরভ কুমার দাস। তখন সেখানে অজ্ঞাত পরিচয় আরও দুই ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা চাকরির শতভাগ প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছে ১৩ লাখ টাকা দাবি করেন এবং ওই টাকা নিয়োগ পাওয়ার পর পরিশোধ করতে হবে বলে তাকে জানান। এরপর তারা ১শ টাকা মূল্যের ২টি ও ৫০ টাকা মূল্যের ১টি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং সৌরভ কুমার দাসের বাবা শ্যামল দাসের কাছ থেকে স্বাক্ষর করা ব্যাংকের একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক নেন। কিন্তু ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় সৌরভ কুমার দাস অংশ নিলেও এতে তিনি অকৃকার্য হন। তখন তিনি বুঝতে পারেন, যারা তাকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা প্রতারক চক্রের সদস্য। এ বিষয়টি সৌরভ কুমার দাসের বাবা শ্যামল দাস ডিবি পুলিশকে অবহিত করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর এসআই মো. মফিজুল ইসলাম ও এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মনিরামপুর উপজেলার হাকোবা গ্রামে অভিযান চালিয়ে পলাশ কুশারীকে আটক করেন। পরে তার স্বীকারোক্তিতে পলাশ কুশারীর ঘর থেকে সৌরভ কুমার দাসের স্বাক্ষর করা স্ট্যাম্প এবং ব্যাংক চেকসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে নেওয়া ১শ টি ব্ল্যাঙ্ক চেক ও ৩১০টি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প এবং ১৩০টি প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়। এ সময় ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক পলাশ কুশারী স্বীকার করেন যে, তিনিসহ তার সহযোগীরা যশোরসহ বিভিন্ন জেলার সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তি করেন এবং শ শ ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া ব্যাংকের ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্বাক্ষর করা নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প রেখে দিয়েছেন। পরে তারই স্বীকারোক্তিতে মনিরামপুর বাজারে অভিযান চালিয়ে চক্রের আরেক সদস্য বুলবুল আহমেদকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এরপর আটক বুলবুল আহমেদের স্বীকারোক্তিতে সদর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামে অবস্থিত সুমন ডেইরি ফার্মের একটি কক্ষ থেকে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৭ জনের প্রবেশপত্রের ফটোকপি উদ্ধার করা হয়।
এসআই মো. মফিজুল ইসলাম জানান, ওই চক্রটি ২০১৮ সাল থেকে এ ধরনের প্রতারণার সাথে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের সদস্যরা সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, আটক পলাশ কুশারী একজন সাবেক মন্ত্রীর কাছের মানুষ বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। তার ভাই এক সময় সাবেক ওই মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আটক দুই জনকে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।