যশোরে তালাক দেওয়া স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলায় নানা প্রশ্ন

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সদ্য তালাক দেওয়া স্বামীর বিরুদ্ধে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একজন কর্মীর ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দুই সপ্তাহ আগে যশোরের কমটেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভেতর পানির সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে ওই নারী কর্মীর অভিযোগ। তবে কমটেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একজন কর্মকর্তা এ জন্য নারী কর্মীকে অভিযুক্ত করেছেন। তার ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানে সেই সময় ওই নারী কর্মী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। নারী কর্মীর সম্মতিতেই তালাক দেওয়া স্বামী ভেতরে ঢুকেছিলেন। আসলে সেখানে কী ঘটেছিলো তা কেউ জানেন না। প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করার অভিযোগে ওই নারী কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ বলছে, তারা নারী কর্মীর ধর্ষণের অভিযোগটি তদন্ত করছে।
শহরের ঘোপ এলাকার বাসিন্দা ওই নারী মামলায় উল্লেখ করেছেন, তিনি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনে কমটেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আয়া পদে চাকরি করেন। সদর উপজেলার সরুইডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল বিশ্বাসের ছেলে আবু দাউদ বিশ্বাস খোকনের সাথে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি পিতার বাড়িতে স্বামীকে নিয়ে বসবাস করতেন। কিন্তু খোকন তাকে ঠিকমতো ভরণপোষণ না দেওয়ায় তিনি ২০২০ সালে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। গত ১ জুন খোকন তাকে তালাক দেন। কিন্তু এরপর থেকে খোকন তাকে ফের বিয়ে করার জন্য ফুঁসলিয়ে আসছিলেন। গত ৭ জুন রাত ৮টার দিকে কথা আছে বলে ওই নারীর কর্মস্থলে আসেন খোকন। আল্ট্রাসাউন্ড কক্ষের ভেতর ঢুকে এ সময় তাকে ফের বিয়ে করার জন্য ফুঁসলান খোকন। এরই মধ্যে নারী কর্মীর পানির পিপাসা লাগলে খোকন কৌশলে ঘুমের ওষুধ মেশানো বোতলজাত পানি তাকে পান করতে দেন। এই পানি পান করার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লে খোকন তাকে ধর্ষণ করেন। পরে জ্ঞান ফিরে এলে নারী কর্মী বুঝতে পারেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। খোকন তার কাছে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে ওই নারী কর্মী এই প্রতিবেদককে জানান, তালাকের বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য তার সাথে দেখা করেন খোকন। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গেটে গিয়ে তিনি তার সাথে দেখা করেছিলেন। এ সময় পিপাসা লাগলে খোকনের দেওয়া পানি পান করার পর তিনি অসুস্থবোধ করেন। তখন খোকন তাকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভেতর যেতে বলেন। পরে প্রতিষ্ঠানের ভেতর ঢুকে খোকন তাকে ধর্ষণ করেন। অবশ্য প্রতিষ্ঠানে তখন কেউ ছিলো না বলে তিনি দাবি করেছেন।
অভিযুক্ত খোকন একটি ধানের আড়তে লেবারের কাজ করেন বলে জানিয়েছেন ওই নারী। তবে তার মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কমটেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অন্যান্য নারী-পুরুষ কর্মচারীরা জানান, তারা এ বিষয়ে কোনোকিছুই জানেন না। গত ১৫ মে তাদের প্রতিষ্ঠানে আয়া পদে যোগদান করেছিলেন ওই নারী। অসুস্থ হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন এই সংবাদ পেয়ে তারা তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। কারা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তার কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (প্রশাসন) বাহারুল ইসলাম জানান, ঘটনার সময় তারা কেউ প্রতিষ্ঠানে ছিলেন না। মূলত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য ওই সময় নারী কর্মী একাকী ছিলেন। তিনি মনে করেন, নারী কর্মীই তার তালাক দেওয়া স্বামীকে ডেকে এনেছিলেন। তা না হলে খোকন প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পারেন না। তবে সেখানে কী ঘটেছিলো তা কেউ জানেন না। পুলিশ এসেছিলো। ঘটনা তদন্ত করে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, ওই নারী কর্মী তার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানালেন বাহারুল ইসলাম।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী জানান, তারা ওই নারীর ধর্ষণের অভিযোগটি তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষ না হলে কিছুই বলতে পারবেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ১ জুন তালাক দেওয়া হলেও ৩ জুন ওই নারী ও খোকন একত্রে বসবাস করেছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। এর সত্যতা তারা খতিয়ে দেখছেন।