বাগেরহাট স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক তানু’র দাফন সম্পন্ন

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ বাগেরহাটে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের গুলিতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম তানু ভুইয়া নিহত হয়েছে। শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে শহরের বাসাবাটি পদ্মপুকুরের মোড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত নুরে আলম তানু ভূঁইয়া বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি এলাকার মৃত আব্দুর রউফ ভূঁইয়ার ছেলে। নিহত তানুর বড় ভাই আবুল কাশেম সেলিম ভূঁইয়া বলেন, আমার ভাইকে কৌশলে ডেকে নিয়ে ফরিদ গুলি করে মেরে ফেলেছে।  এ হত্যাকান্ডকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। নিহতের বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। নিহতের বোন রুপা বলেন, রাত ৯টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে বগা ক্লিনিকের দিকে যায় আমার ভাই তানু। কিছুক্ষণ পরেই পরপর চারটা গুলির শব্দ পাই। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা আমার ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।  এবিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, তানু ভূঁইয়া আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই। শনিবার দুপুরে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। পরে দুপুর দুইটায় নিহত নুরে আলম তানু ভুইয়ার বাড়ির সামনে বাসাবাটি এলাকায় তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় শহরের পুরাতন বাজার মোড় এলাকায় শেষ নামাজে জানাজা শেষে সরুই কবর স্থানে দাফন করা হয় সাবেক এই ছাত্রদল নেতাকে। এদিকে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীর নামাজে জানাজায় অংশ নিতে জাতীয়তাবাদী দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পুরাতন বাজাড় মোড়ে জড়ো হন। নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তারা। হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ঝটিকা মিছিল করেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আনিন্দ ইসলাম অমিত, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের খুলনা বিভাগীয় সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ, বিএনপি নেতা শাহেদ আলী রবি, খায়রুজ্জামান শিপনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তানু ভুইয়ার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষনা করেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। এর আগে দুপুর একটার দিকে তানু ভুইয়ার মরদেহ হস্তান্তরের সময় হাসপাতাল গেটে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। সাহসী নেতাকর্মীদের দেশব্যাপি যে হত্যাকান্ড ঘটছে এটা তারই ধারাবাহিকতা বলে উল্লেখ করেন নেতারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আনিন্দ ইসলাম অমিত বলেন, আমরা দীর্ঘদিনের একসহকর্মীকে হারিয়েছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শোক জানাচ্ছি। জাতীয়তাবাদী দল আজীবন নিহত তানু ভুইয়ার পরিবারের পাশে থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানাবো নিরপেক্ষ থেকে তানু ভুইয়ার হত্যাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন। তিন দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম শান্ত বলেন, আমাদের ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আমরা তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সোমবার জেলার প্রতিটি ইউনিটে দোয়া ও আলোচনা সভা। মঙ্গলবার জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। তৃতীয় ও শেষ দিন বুধবার প্রতিটি উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নিবেন। এদিকে ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়ক পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, তানু ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি ফরিদ নামের এক ব্যক্তির গুলিতে নিহত হয়েছেন। বন্ধুকধারী ফরিদকে আটক করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। ফরিদের নামে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৫টি মামলা রয়েছে।
অভিযুক্ত ফরিদ বাসাবাটি এলাকার টুটুল শেখের ছেলে। ফরিদের নামে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৫টি মামলা রয়েছে।