সক্রিয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়াই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম

0

সুন্দর সাহা॥ অস্থির হয়ে উঠেছে যশোরের চালের বাজার। দিন যতই যাচ্ছে চালের দামও ততই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে হতবাক চাল বিক্রেতারাও চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। গত মওসুমে দেশে কোনো বন্যা হয়নি। ছিল না কোনো খরা। পরিবেশ অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনও হয়েছে আমন ধানের। কৃষকের ঘরে রয়েছে নতুন আমন ধান। তবুও চালের দাম বেড়েই চলেছে।
বিক্রেতাদের কথা একটাই, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় খুচরা পর্যায়েও বাড়ছে চালের দাম। আর পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে মিল মালিকরা চাল সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় বাজারে চালের সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু মিলমালিকরা বাজারে চাল সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার কারণ কী জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর নেই পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তবে যশোরের একজন চাল ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে চাল সরবরাহ কমে যাওয়ার মতো কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তারাও। কারণ এ বছর দেশে কোনো বন্যা হয়নি। ছিল না খরা, অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি। পরিবেশ অনুকূলে থাকায় আমনের বাম্পার ফলনও হয়েছে। কার্যতঃ কৃষকের ঘরে এখন গোলাভর্তি ধান। তবুও চালের সরবরাহ কেন কমিয়ে দেয়া হলো বুঝতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের মতো মিলমালিকরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করেই চালের সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। দিন যতই যাচ্ছে চালের দাম ততই বাড়াচ্ছেন মিল মালিকরা। এ জন্য সরকারের নজরদারি প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা। যশোরের চালের বাজারের কয়েকজন সাধারন ব্যবসায়ী জানান, চালের দাম বাড়ার এখন কোনো কারণ নেই। যদি কোনো কারণ থাকে, তা হলো সিন্ডিকেট। বেশি মুনাফার লোভে মিলমালিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে বাজারে চাল সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন, এমনই হতে পারে। যশোরের বড় বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে যে হারে চালের দাম বাড়ছে সে হারে তো ধানের দাম বাড়েনি। ধানের দাম বাড়ারও সময় নয় এখন। কৃষকের ঘরে এখনও নতুন আমন ধান রয়েছে। আরো মাসখানেক পর হয়তো ধানের দাম একটু বাড়তে পারে। এখন তো নয়। বরং ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে চাষিদের। যশোরের চালের বাজারের ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান জানান, পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ৫৪ টাকা কেজি দরের মিনিকেট চাল বিক্রি করছি ৬০ টাকায়। ৪৮ টাকায় বিক্রি করা বিআর-২৮ চাল এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৫২ টাকায়। দেশি বাসমতি (সিদ্ধ) চালের কেজি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৬৮টাকায় ঠেকেছে। একই ভাবে ৫১/৫২ টাকা কেজি দরের নাজিরশাইল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৬/৫৭টাকা। জিরাশাইল (সিদ্ধ) ৬৫ টাকা থেকে ৬৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩৮/৪১ টাকা কেজির স্বর্ণা (সিদ্ধ) চালের দাম এখন ৪৩/৪৪ টাকা। ৫২/৫৩ টাকার কাজল লতা বিক্রি হচ্ছে ৫৫/৫৬টাকা করে। মোটা সিদ্ধ ও চিনিগুঁড়া চাল মানভেদে কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৪/৫ টাকা। মূলতঃ পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়ছে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে ৩টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ ক্রেতাদের। চালের এই মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে প্রশাসন কিছুই জানে না। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই। কেউ রাখছেন না চালের দামের উর্ধ্বগতির কোন খোঁজখবর। এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। তবুও বাড়ছে চালের দাম, এটাই বাস্তবতা।
সংশি¬ষ্টরা বলছেন, এ সময়ে চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। পুরোনো সিন্ডিকেট নতুন করে ফের সক্রিয় হচ্ছে। একশ্রেণীর মিল মালিক ও ব্যবসায়িরা কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। ফলে বাড়ছে ধান ও চালের দাম। তাই এই মজুদ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন আড়তদাররা। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বিড়ালের গলায় গন্টা বাধার কেউ নেই। অভিযোগ রয়েছে, কালো তালিকাভুক্ত মিল মালিকদের ওপর কোনো নজরদারী না থাকায় চালের এই মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। চলতি বছরের শুরুর আগে থেকেই চালের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। এবার উৎপাদন আশাব্যঞ্জক হওয়া সত্বেও কেন চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে, খাদ্য অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহবুবুর রহমান খান লোকসমাজকে জানান, “প্রথম কারণ আমন মৌসুমটা কার্যতঃ মোটা ধানের উৎপাদন বেশি হয়। চিকন ধান তেমন উৎপাদন হয় না বললেই চলে। এ কারণে বর্তমানে চিকন চালের দাম অনেকটায় বেড়ে গেছে। বাজার পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে চিকন চালের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫/৭ শতাংশের মত।” দাম বৃদ্ধির কারন সম্পর্কে বিভাগীয় এই খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরও বলেন,“বড় বড় কোম্পানী, মিলার ও মজুদদারের কারণে বাজারে দাম বাড়ছে। আবার কৃষকও বাড়তি লাভের আশায় সব ধান বাজারে আনছেন না। আর সিজনাল মজুদদারের অধিক্য তো রয়েছেই।” তবে এই পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।